দাদন ব্যবসায়ীর রাতভর নির্যাতনে আহত রিকশাচালকের মৃত্যু
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে দুই পা বেঁধে রাতভর নির্যাতনে আহত সেই রিকশাচালক ছকু মিয়া মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে মোজাম্মেল হক।
এর আগে, গত ১৫ মে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর (পাতারীবাড়ি) গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে রিকশাচালক ছকু মিয়ার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এ নিয়ে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টে টানা ১২ ঘণ্টা রিকশাচালককে পেটালেন দাদন ব্যবসায়ী ছয় ভাই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
বিজ্ঞাপন
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, একই গ্রামের ছয় ভাই আলমগীর, আঙ্গুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদনের (সুদ) কারবার চালিয়ে আসছেন। সুদের টাকায় তারা অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মন্টু মিয়ার মেয়ে প্রতিবেশী ছকু মিয়ার ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যান। কিছু সময় পর মন্টুসহ তার পাঁচ ভাই দল বেঁধে ছকু মিয়ার বাড়িতে যান। তারা ছকু মিয়াকে রাত-ভর এলোপাতাড়ি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করেন।
এ সময় তার এক হাত ও এক পা ভেঙে যায়। ভেঙে যায় একটি দাঁতও। রাতভর নির্যাতনের পর সকাল থেকেই ছকু মিয়ার বাড়িতে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়। ১৬ মে বিকেল ৫টার দিকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ছকুকে উদ্ধার করে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এরপর স্থানীয়ভাবে এক শালিস মিটিং করে এলাকাবাসী। পরে এক তথ্যের সূত্র ধরে ছকু মিয়ার বড় ভাই গত ২০ মে গাজীপুরের মৌচাক এলাকা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাদের ফিরিয়ে দেয়। এরপর আবারও এক শালিস বৈঠকে ছকু মিয়া ও তার ভাইদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর আবারও ছকু মিয়া ও তার ভাইদের নানা ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন মন্টু মিয়াসহ তার পরিবারের লোকজন।
এ ঘটনার দুইদিন পর প্রাণ ভয়ে গত ৩১ মে ছকু মিয়া গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নেয় ঢাকায়। সেখানে ছেলে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ তিনি মারা যান।
নিহতের ছেলে মোজাম্মেল হক বলেন, তারা আমার বাবাকে পিটাইছে। বাড়ি থাকি বাহির করি দিছে। আব্বা, দুইদিন আগে শ্রীপুরে আমার বাসায় আসছে। আজ দুপুরে মারা গেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, মৃত্যুর খবর লোকমুখে শুনেছি। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রিপন আকন্দ/এমএএস