দুর্গাপুরের সাদা মাটির পাহাড়ে পর্যটকের ভিড়

ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেত্রকোণার দুর্গাপুরের সাদা মাটির পাহাড়। নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের দিন থেকেই ভিড় করছেন পর্যটকরা। ২০২১ সালের ১৭ জুন জিআই পণ্য হিসেবে সনদ পায় দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের পর্যটনকেন্দ্র সাদা মাটি।
গারো পাহাড় বেষ্টিত সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। এ উপজেলার বিজয়পুরের সাদা মাটির পাহাড় সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এবারের ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে সাদা মাটির পাহাড় পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে, আবার কেউ আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে। সুন্দর মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করতে কেউ কেই আবার হচ্ছেন সেলফিবন্দি। পাশাপাশি রয়েছে পেশাদার ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তোলার সুবিধা। সাদা মাটির পাহাড়ে বাহারি রং ও নীল পানির লেকের অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত হওয়ার মতো বলছেন পর্যটকরা।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে বেড়াতে এসেছেন লিজা আক্তার। তিনি বলেন, এখানে এসে দেখতে পাচ্ছি ঈদ উপলক্ষ্যে একটি জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ। প্রচুর মানুষ এখানে ঘুরতে এসেছেন এবং এখানে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এখানকার পরিবেশটা আমরা খুব উপভোগ করছি। আমরা খুব সকালে এখানে এসেছি এবং যত সময় যাচ্ছে, ততই দেখছি লোকজনের সমাগম বাড়ছে। এখানকার পরিবেশ আমার খুব ভালো লেগেছে। আশা করি যারা এখানে বেড়াতে আসবেন, তারা ভালো একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে এখান থেকে ফিরে যাবেন।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মিডিয়াকর্মী ফয়েজ আহমেদ বলেন, এক সময় বন্ধুদের নিয়ে এখানে বেড়াতে আসতাম। কিন্তু এখন যে এটা এ রকম একটা জমজমাট পর্যটনকেন্দ্র হয়েছে এটা আমার জানা ছিল না। আমার কাছে মনে হয়, এটা যেহেতু পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এটার সম্ভাবনাটা কাজে লাগিয়ে এটাকে অনেক দূর নেওয়া সম্ভব। এখানে অনেক ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে তাদের থাকার ব্যবস্থা, নিরাপত্তার ব্যবস্থা এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এখানে যারা পর্যটক আসছেন, তাদের কীভাবে আরও বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা। যেহেতু এটা সাদা মাটির পাহাড়, এশিয়াতে আমাদের এই ব্যাপারটা বিরল। সে বিষয়টা মাথায় রেখে এখানে একটা গবেষণা কেন্দ্র করা যায়। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা এখানে এসে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করতে পারবে।
গাজীপুর থেকে বেড়াতে আসা লামিয়া আক্তার বলেন, সবার মুখে সব সময় শুনে এসেছি সাদা মাটির পাহাড় দেখতে অনেক সুন্দর। তাই এবার ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। এবং এখানকার যে পরিবেশ এই পরিবেশ দেখে আমরা সবাই অনেক আনন্দিত। তবে এখানে যারা বেড়াতে এসেছেন তাদের জন্য যদি আরেকটু সুযোগ-সুবিধা থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো।
সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে আরও আকষর্ণীয় করে তুলতে পারলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা রকমের দোকানপাট। এই ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের আগমনে ব্যবসা ভালো হওয়ায় স্বস্তির হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ী ও ফটোগ্রাফারদের মুখে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, ঈদের ছুটিতে এখানে পর্যটকের ভিড় অনেক বেড়েছে। এমনিতে সারা বছর কম-বেশি পর্যটক থাকলেও, এখন প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসেন ঈদের ছুটির কারণে। পর্যটকরা এসে ঘুরে দেখছেন, আনন্দ করছেন, আমাদেরও একটু বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমরা আশা করছি ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী ১০দিন পর্যন্ত এখানে লোকজনের ভালোই সমাগম থাকবে।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে দুটি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ঘুরতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে, সেজন্য আমরা নির্দিষ্ট কিছু স্থান পয়েন্ট আউট করেছি। ওই পয়েন্টগুলোতে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকরা যেন নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারেন আমরা তা নিশ্চিত করেছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/আরএআর