আইনজীবীর মৃত্যু: এসআই মহিউদ্দিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে পুলিশি নির্যাতনে হত্যার অভিযোগে বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহিসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন নিহত আইনজীবীর বাবা ইউনুস মুন্সী।
বিজ্ঞাপন
মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন পিবিআই কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান। বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সেলিম বলেন, মামলার পরবর্তী শুনানির ধার্য তারিখ রাখা হয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে বলেন, বরিশাল আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী জাকির হোসেন মিন্টুর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন রেজাউল করমি রেজা। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রেজাউল করিমকে রূপাতলী সাগরদী এলাকার আব্দুল হামিদ খান সড়কের সামনে থেকে সাদা পোশাকে আটক করেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিনসহ তিনজনের টিম।
প্রতিবেশী কবিরের ছেলে সজীবের কাছ থেকে খবর পেয়ে রেজাউলের বাবা ইউনুস মুন্সী ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন সড়কের পাশে অন্ধকার ঘরে মহিউদ্দিন তার সহযোগীদের নিয়ে রেজাউলকে লাঠি দিয়ে মারধর করছেন। ইউনুস মুন্সী উপস্থিত হলে রেজাউল করিমকে মারধর করা বন্ধ করে দেন মহিউদ্দিন ও তার সহযোগীরা।
মারধরের কারণ জানতে চাইলে ইউনুস মুন্সীকে মহিউদ্দিন বলেন আপনার ছেলের কাছে মাদক পাওয়া গেছে। আপনার ছেলেকে দুজন লোক ধরিয়ে দিতে বলেন। তাহলে ছেড়ে দেব। মহিউদ্দিনের প্রস্তাব রেজাউল অস্বীকার করলে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যান।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ছোট ভাই আজিজুল বাসার বরিশাল গারদখানায় রেজাউল করিমের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন ভাই আজিজুলকে রেজাউল জানান রাতভর এসআই মহিউদ্দিন ও দুই সহযোগী রোলার দিয়ে পিটিয়ে তাকে আহত করেছেন। মারধরের সময় রেজাউলকে শীতবস্ত্র দেননি। এমনকি খাবারও দেননি। রেজাউল গারদখানায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে গ্রেফতারের পর গারদে রেজাউলকে রাখলেও আদালতে হাজির করা হয়নি। গারদ থেকে ভ্যানে করে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে ইউনুস মুন্সীর মোবাইলে জেলখানা থেকে কল করে বলা হয়, অসুস্থ রেজাউলকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে; তাকে জীবিত দেখতে চাইলে স্বজনরা যেন হাসপাতালে যান।
খবর পেয়ে রেজাউলের স্ত্রী মারুফা ও ভাই আজিজুল হাসপাতালে গিয়ে দেখেন রেজাউলের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। রেজাউল মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। সারারাত হাসপাতালে মারুফা ও আজিজুল সেবাযন্ত্র করেন রেজাউলের।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাসায় যান রেজাউলের স্ত্রী ও ভাই। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ইউনুস মুন্সীকে হাসপাতাল থেকে কল করে জানানো হয়, দ্রুত যেন হাসপাতালে যান। হাসপাতালে গিয়ে রেজাউলকে মৃত দেখতে পান বাবা। মামলায় নির্যাতনপূর্বক হত্যার ঘটনায় নির্যাতন ও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর ১৩ (১) ধারা ও দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় এসআই মহিউদ্দিনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে রেজাউলের মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে রোববার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষুব্ধরা অভিযুক্ত এসআইয়ের বাসভবনে হামলা চালান। এরপরই তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন বিএমপি কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। সর্বশেষ সোমবার রাতে এসআই মহিউদ্দিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এএম