ভারতীয় ধরন শনাক্ত এবং করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পাঁচ দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে স্থলবন্দর বন্ধের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালকরা। 

জানা গেছে, ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও ফাঙ্গাস নামে একটি ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় বন্দরসহ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চার দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম (৩০ মে থেকে ৩ জুন) পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বন্দর ব্যবসায়ীরা।

এদিকে আমদানি-রফতানি বন্ধের কারণে আটকা পড়েছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা শতাধিক ট্রাকচালক। পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব ট্রাকচালক। থাকা-খাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ভারতে প্রবেশ করে পণ্য খালাস করতে পারবে কি না সেক্ষেত্রে কোনো আশ্বাস কিংবা কিছুই জানানো হচ্ছে না তাদের। ফলে কয়েকদিন ধরে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এ বিষয়ে ঢাকার সাভার থেকে আসা ট্রাকচালক খোরশেদ আলম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বন্দরে বসে আছি। পণ্য খালাস করতে না পারায় বেকার হয়ে পড়ে আছি। এখানে খাওয়ার মতো কোনো হোটেল নেই, নেটওয়ার্ক নেই, বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারছি না। পোর্ট বন্ধ থাকবে জানলে আমরা পণ্য নিয়ে আসতাম না। ৭ দিন ধরে আছি, আরও কয়েক দিন থাকতে হবে বলে জানাচ্ছে। যা টাকা ছিল সব তো শেষ। এখন নিরুপায় হয়ে পড়ছি আমরা।

একই কথা জানান আরেক ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, পণ্য নিয়ে বন্দরে ১০ দিন ধরে পড়ে আছি। এখন আবার বলছে আরও ৭ দিন পর ভারতে পণ্য নিয়ে যেতে পারব। একেক সময় একেক কথা বলছে। বন্দর বন্ধের সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়ায় আমরা বাইরের চালকরা পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়ে গেছি। না পারছি ভারতের বর্ডার পার হতে না পারছি ফিরে যেতে। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে আমাদের। সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন জানান, স্থানীয়দের দাবির মুখে ও সংক্রমণ রোধে বন্দরের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে ট্রাকচালকরা বিপাকে পড়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভারতীয় ধরন ও ফাঙ্গাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয়দের স্বার্থে ব্যবসায়ীরা বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। তবে দাফতরিক সকল কাজকর্ম চলমান রয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বন্দর সুরক্ষায় চালকদের নিজ নিজ অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পণ্য খালাস করতে না পারায় অনেক দেশীয় ও ভারতীয় ট্রাকচালক বন্দরে আটকা পড়েছেন। তারা যেন একত্রিত হয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে না পারে সেজন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির উদ্যােগে বন্দর এলাকায় বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ট্রাকচালকদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

রনি মিয়াজী/এসপি