সীমাহীন দুর্ভোগে বানভাসিরা
চারিদিকে পানিতে থই থই। জোয়ারের সময় নদী আর ঘের-পুকুর বোঝার উপায় নেই। প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। নিচু এলাকায় পানি ছুঁয়েছে ঘরের ছাউনি পর্যন্তও। পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। নোনা পানিতে মরে ভেসে উঠেছে মিষ্টি পানির মাছ।
ঘর ছেড়ে অনেকেই পার্শ্ববর্তী উঁচু স্থানে এবং সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকেই জোয়ারের আগেই ঘর ছাড়ছেন। আর ভাটার টানে ঘরে ফিরছেন। জোয়ার-ভাটা খেলছে সেখানে। চারিদিকে এতো পানি, কিন্তু সুপেয় পানির অভাব রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
খাবার পানির উৎস বন্ধ। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, খাবার স্যালাইন। আছে দুর্ভোগ। রান্না তো দূরের কথা, ঘরের চৌকির ওপর থাকাও দুরূহ ব্যাপার। ফলে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়াসহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে সেখানে। এমনটাই জানিয়েছেন কয়রা উপকূলীয় এলাকার মানুষ।
২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে খুলনার উপকূল কয়রার বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসলি জমি। এখনো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। বাজার-ঘাট খাওয়ার ব্যবস্থার কোনো ঠিক নেই। স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ, বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। প্রতিদিন জোয়ারে পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসিদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের শিমলারাইট পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও মসজিদে পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। পুকুর ও ঘেরগুলো নোনা পানিতে ভেসে গিয়েছে। বিশেষ করে রুই, কাতলাসহ মিষ্টি পানির মরে ভেসে উঠেছে। মরা এসব মাছ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ওয়ার্ল্ডভিশনের ফিল্ড ফেসিলেটর মো. আশরাফুল আলম বলেন, এখানে মাছের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এটি মাছ চাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বর্তমানে মাছ চাষের মৌসুম। লোনা পানি মিষ্টি পানির পুকুরে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আর নোনা পানির চিংড়ি মাছও ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দশহালিয়া গ্রামের বিকাশ চন্দ্র মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘর-বাড়ি ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। মাছ মরে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তিনি।
গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সময় মৎস্য চাষের একটা উপযুক্ত সময়। কিন্তু নদী ভাঙনে সবকিছু শেষ। একবছরেও টেকসই বাঁধ পেলাম না। যে কারণে সামান্য জোয়ারেও পানি প্রবেশ করছে। আমার ঘর-বাড়ি, ঘেরসহ সবকিছু শেষ।
গোবিন্দপুর ইসলামী যুবসংঘের সভাপতি মো. বায়জিদ হোসেন বলেন, জোয়ারের সময় ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। আর ভাটার সময়ও পানি থাকছে। অনেক স্থানে রান্না করার সুযোগ নেই। মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে মিষ্টি পানির মাছ মরছে। পানি দূষিত হয়েছে।
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আলাউদ্দিন জানান, উপজেলার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর এলাকা তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ১০০ ঘের এবং ৭৫০ পুকুর তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মিষ্টি পানির পুকুরগুলোর মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদীপ বালা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলয়েট, খাবার স্যালাইন, ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। ফিল্ডে কর্মী রয়েছেন ৫২ জন। এই জনবল দিয়ে উপজেলায় কাজ করতে হচ্ছে। তাদের নিজেদের বাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পানি সরবরাহ করছে। ফলে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় ডায়রিয়া হতে পারে। তবে প্রকোপ আকার ধারণ করেনি।
এমএসআর