গ্রামের মেয়ে থেকে ‘অ্যাগ্রো ইনফ্লুয়েন্সার’ হয়ে ওঠা পপির গল্প

উম্মে কুলসুম পপি
সবুজে ঢাকা নিভৃত গ্রাম। কৃষিময় প্রকৃতির মাঝে মেঠোপথ। চারপাশ খালবিল-পুকুরে ভরা। দিগন্তজুড়ে কৃষাণ-কৃষাণীর হাড়ভাঙা শ্রমের বিস্তৃত ক্ষেত। কখনো শান্ত বা ক্ষ্যাপা বাতাসের সাথে হেলেদুলে গাছগাছালির খেলা। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে মাটির বুক কখনো শুষ্ক নয়তো কাঁদাময়। নরম বেলে দো-আঁশ এ মাটির পরতে পরতে গ্রামীণ আবহ। কখনো ভেসে আসে আম-কাঁঠালের ঘ্রাণ, কখনো বা পচা পাটের গন্ধ। ধানক্ষেতের মধ্যে থাকা সরু আইল দিয়ে হেঁটে চলা কিংবা পুকুরপাড়ে, নয়তো নদীর তীরে বসে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠা। গ্রামের এমন পরিবেশের সাথে মিশে আছে উম্মে কুলসুম পপির শৈশব ও কৈশোরের বহুস্মৃতি।
তিস্তাপাড়ের কন্যা উম্মে কুলসুম পপি নিজেকে ‘গ্রামের মেয়ে’ হিসেবে গর্বভরে পরিচয় দেন। তিনি লালমনিরহাটের এক গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সহযোগী হয়ে কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য শহরমুখী হলেও ঘুরে ফিরে ছুটে গেছেন কৃষির কাছে। দুরন্ত প্রকৃতির পপি সময়ের সাথে লক্ষ্য ঠিক করে চেষ্টা করেছেন নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে মেলে ধরতে। সেই চেষ্টায় সফলও হয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
নিভৃত গ্রাম থেকে উঠে আসা পপি এখন বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক অনন্য নাম। যাকে বলা হয়ে থাকে দেশের প্রথম নারী ‘অ্যাগ্রো ইনফ্লুয়েন্সার’। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি পরিচিতি পেয়েছেন অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে। তার উদ্যোগ, নিষ্ঠা, এবং কৃষির প্রতি গভীর ভালোবাসার মাধ্যমে তিনি দেশ-বিদেশের কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তার কৃষি বিষয়ক ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যা নতুন প্রজন্মকে কৃষিতে আগ্রহী করে তুলেছে।
অথচ পপির সামনে এখন যেমন শুধুই সাফল্যের গল্প, তেমনি শুরুর দিকে ব্যর্থতাও ছিল। তবুও পথ হারাননি পপি। অনেক ঝড়-ঝাপটা, আর্থিক অনটনেও তিনি দমে যাননি। ইচ্ছেশক্তিকে অদম্য শক্তিকে পরিণত করে শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে জয়ী হন। এখন তিনি সফল নারীদের একজন।
কে এই উম্মে কুলসুম পপি
সামাজিক যোগাযোাগ মাধ্যমে উম্মে কুলসুম পপি কারও কাছে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিত। আবার কারও কাছে পরিচিত ‘কৃষিবন্ধু বা কৃষকের বন্ধু’ হিসেবে। তিনি শুধু ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করেই থেমে নেই, প্রতিনিয়ত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে তিনি স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং তাদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। তার প্রচেষ্টার ফলে পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীও কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
উম্মে কুলসুম পপি নিজেও একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগে তৈরি করা বিভিন্ন কৃষিপণ্য বাজারজাত হচ্ছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা উন্নত করতে সহায়তা করছে। তবে পপির জনপ্রিয়তা ও পরিচিতির নেপথ্যে রয়েছে কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকে তৈরি করা ছোট ছোট তথ্যবহুল ভিডিও কনটেন্ট। যেখানে তিনি তুলে ধরেন নানা ধরনের ফুল, ফল, সবজি, ওষুধি গাছ ও দেশি-বিদেশি চাষবাদের পাশাপাশি কৃষিজ নানা কৌশল নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। এক্ষেত্রে ভিডিওগুলো অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে বৃহৎ সংখ্যক দর্শককে প্রভাবিত করছে।
যেভাবে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন পপি
পপি পড়াশোনা করতেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পড়তে গিয়েই আবু সাঈদ আল সাগরের সঙ্গে পরিচয়। পপি পড়তেন ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ে আর সাগর ছিলেন পরিসংখ্যানের ছাত্র। কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘ক্রিয়েটিভ সোসাইটি’ নামে একটা সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন সাগর। উপস্থাপনা শেখার পাশাপাশি সেখানে গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ভিডিও এডিটিং শেখানো হতো। তাদের সঙ্গে পপিও যোগ দিলেন।
আরও পড়ুন
এ সময় পরিচয় হয় একই বিশ্ববিদ্যায়ের আরও কিছু সহপাঠীর সঙ্গে। তাদের কাছে শোনেন পরিবার ও জীবনযুদ্ধের গল্প। পপি নিজেও ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তাই এসব বিষয় সহজে উপলব্ধি করতে পারেন। এ সময় মাথায় আসে এসব শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথা। যাতে তারা নিজেদের আয়ের অর্থ দিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাতে পারেন। নিজের আইডিয়া শুধু ভাবনায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি পপি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত বড় ভাইদের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলেন এবং পরামর্শ চান।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ক্রিয়েটিভ সোসাইটি’ নামের প্ল্যাটফর্মই ‘বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট লিমিটেড’ নামে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগে রূপ নেয়। এ সময় তারা টেকনিক্যাল হোম সার্ভিস নিয়ে কাজ শুরু করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ড্রপআউট শিক্ষার্থী এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে অকৃতকার্য ১৫-২০ জনকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেন সেখানে। ক্যাম্পাসের বাইরে নেওয়া হলো অফিস। প্রথমে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অর্ডার সংগ্রহ করে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল সার্ভিস দিতে থাকে বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট। এটি ছিল পপি ও সাগরদের প্রথম পদক্ষেপ।
একটি পুরস্কার ও পপির জীবনে নতুন মোড়
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ‘বিজনেস আইডিয়া’ নামক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নেন পপি ও তার বন্ধুরা। তাদের একটি বিজনেস আইডিয়ার জন্য বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট এ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেল। মুম্বাই যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো তাদের। কিন্তু বাড়ি থেকে পপিকে যেতে দিল না। আকাশ পথে একাই উড়াল দিল সাগর। এক সময় পপি ও সাগরের মনে হলো- তাদের দুজনের ভাবনা এবং স্বপ্নের ঠিকানা যেহেতু কাছাকাছি, তাই সম্পর্কটাকে পাকাপাকি করা দরকার। বিয়ের পিড়িতে বসলেন তারা। যেখান থেকে জীবনে আরেকটি নতুন মোড়ে পা বাড়ান পপি। শুরু হয় নতুন পরিকল্পনায় ব্যবসা প্রসারের চিন্তা।
একটা ধাক্কা ও নতুন সুযোগ নতুন আইডিয়া
ইতিহাসের ভয়ংকর স্মৃতি কোভিড-১৯ বা করোনা অতিমারী। প্রচুর নতুন উদ্যোগের মতো ২০২০ সালে ধাক্কা খেল বিডি অ্যাসিস্ট্যান্ট। হোম সার্ভিস নিতে কেউ আর তাদের ডাকে না। শুরুর সময় থেকে যারা ছিলেন তারাও ভালো ক্যারিয়ারের স্বপ্ন নিয়ে ছেড়ে যান। তখন ছোট্ট এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সাময়িক স্থবির হয়ে যায়। কিন্তু পপি হাল ছাড়েননি। সংকল্পে অটল চাকরি করবেন না, চাকরি দেবেন।
করোনার মধ্যে পপির মাথায় নতুন আইডিয়া আসে। সে সময় আমের মৌসুম চলছিল। মানুষের কাছে মৌসুমি ফলের ব্যাপক চাহিদা। পপি আর সাগর মিলে অনলাইনে রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। করোনাই আবার অন্যভাবে সুযোগ তৈরি করে দিল। কারণ ওই সময়টাতে সরবরাহ করতে না পারায় প্রচুর আম নষ্ট হচ্ছিল। মানুষও করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে বাইরে তেমন একটা বের হতো না। এ ব্যাপারটি কাজে লাগান তারা।
রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ শুরু করলেন। এই উদ্যোগটার নাম দিলেন ‘প্রিমিয়াম ফ্রুটস’। চাষিদের কাছে আম সংগ্রহ করে বাগান থেকেই গ্রাহকদের কাছে পাঠানো শুরু হলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও চালালেন। ভালো আম সরবরাহের জন্য সে সময় ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন পপি ও সাগর।
পরের বছর সারা দেশে হাঁড়িভাঙা ছাড়াও বিভিন্ন জাতের আম সরবরাহ শুরু করেন। নিজেরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আমবাগান ইজারা নিয়ে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করেন এবং বাগানের বিষমুক্ত আমের ভিডিও আপলোড করতে থাকেন ফেসবুক ও ইউটিউবে। সেসব ভিডিও দেখে গ্রাহকদের আস্থা বেড়ে যায়। পপি এখন শুধু হাঁড়িভাঙা আমই সরবরাহ করেন না, বিষমুক্ত বিভিন্ন মৌসুমি ফল সরবরাহ করেন পুরো দেশে। ২০২২ সালে ‘প্রিমিয়াম ফ্রুটস’ নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে রংপুরের বাইরেও কার্যক্রমের বিস্তৃতি শুরু করে।
যেভাবে ‘অ্যাগ্রো ইনফ্লুয়েন্সার’ হলেন পপি
উম্মে কুলসুম পপি ২০১৮ সালে নিজের ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। প্রথম দিকে তার ভিডিওগুলো খুব বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে না পারলেও, ধীরে ধীরে তিনি তার সৃজনশীলতা ও উপস্থাপনা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে শুরু করেন।
তিনি ভিডিওগুলোতে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ধারণা, যেমন ফসল উৎপাদন, জৈব সার ব্যবহার, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার পথনির্দেশনা দেন। এসব ভিডিওতে শুধু কৃষি সম্পর্কিত তথ্যই নয়, বরং কৃষিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও আকর্ষণীয় ও সহজ করে তুলেছেন। তার প্রতিটি ভিডিওতে প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং একজন নারী হিসেবে কৃষিতে ভূমিকা রাখার সাহসিকতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
পপি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি লাখো মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন। তার ভিডিওগুলোতে বাস্তবিক কৃষি সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা শুধু নতুন কৃষকদের জন্যই নয়, বরং পুরনো কৃষকদের জন্যও বেশ সহায়ক। ইউটিউব ছাড়াও ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমেও তিনি সক্রিয় আছেন, যেখানে তার ভক্ত সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
উম্মে কুলসুম পপি দেশের কৃষি ও সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে একটি শক্তিশালী সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন। তার ভিডিও কনটেন্টগুলো শুধু একটি কৃষি শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং কৃষিতে নারীর সম্ভাবনার উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং নিষ্ঠা থাকলে একজন নারীও কৃষিক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। নারী কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানিত হয়েছেন। অ্যাগ্রো ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে তিনি শুধু দেশের প্রথম নারীই নন, বরং কৃষি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসারে একজন পথিকৃৎ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পপির ফলোয়ার
অনলাইন জগতের কৃষিজ কমিউনিটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে সফলভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে উম্মে কুলসুম পপি। বর্তমানে ফেসবুকে তার একটি পেজে ২.৪ মিলিয়ন (২৪ লাখ) এবং আরেকটিতে ৯ লাখ ৭২ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। ইউটিউবে তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সংখ্যাটিও বাড়ছে ধাই ধাই করে। অনেকের মতো পপিও শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক ডকুমেন্টরি দেখে বড় হয়েছেন। তিনি তালহা জুবায়ের মাসরুর ও আজহারুল ইসলামের মতো সমসাময়িক উদ্ভিদবিদদের দ্বারাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
পপির কন্টেন্টগুলো বেশ রিফ্রেশিং ও সহজবোধ্য। একের পর এক ফলের বাগান থেকে শুরু করে বিস্তৃত মাঠে তিনি ঘুরে বেড়ান। এক্ষেত্রে তিনি কন্টেন্ট তৈরির জন্য একেকটি সুনির্দিষ্ট টপিক খুঁজে বের করেন। তারপর তিনি এটিকে সহজ, সরল বাংলায় তুলে ধরেন, যেন বিষয়টি সবার কাছে বোধগম্য হয়।
কেন এত মানুষ পপিকে দেখেন
সফল নারী উদ্যোক্তা উম্মে কুলসুম পপি বলেন, মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটা সহজভাবে দেখায় আমরা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই সার্বজনীন বন্ধনের কারণেই আমার ভিডিওগুলো সকল পেশা ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে বৈচিত্রময় দর্শকদের সাথে মিলে যায়।
তিনি আরও বলেন, আপনি যদি মানুষকে তাদের অবসরের পরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তবে বেশিরভাগই আপনাকে বলবে যে তারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান। বাগান কিংবা কৃষিকাজ করে আরও বেশি সময় কাটাতে চান। কৃষি যেহেতু প্রকৃতির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, তাই শুধু কৃষকদের জন্য নয় বরং এই আগ্রহটি যে কারোও ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।
পপির পথচলা সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে কৃষকদের সাথে তার সক্রিয় সম্পৃক্ততা।
তিনি বলেন, কৃষকরাই প্রকৃত উদ্ভাবক। তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফসলের নতুন কৃষি জাত এবং কৌশল পরীক্ষা ও প্রয়োগ করে আসছে। তবুও তাদের জ্ঞান প্রায়শই তাদের স্থানীয় এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। তাদের এই জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করতে ও বৃহত্তর কল্যাণের জন্য আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
পপির নতুন আইডিয়া অ্যাগ্রিট্যুরিজম
ফলের পাশাপাশি নিরাপদ সবজি, নিরাপদ খাবার প্রক্রিয়াজাত নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে পপির। তার চিন্তায় নতুন আইডিয়া হিসেবে যুক্ত হয়েছে অ্যাগ্রিট্যুরিজম। রংপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাদের নিজস্ব কৃষি প্রকল্পে সবজি ও ফলের গাছ বড় হচ্ছে। সেখানে আছে মাছের পুকুর। পর্যটকরা সেখানে গিয়ে নিজ হাতে ফল পেড়ে খেতে পারবে। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। পুকুরে মাছ ধরতে পারবে। গোয়ালে গরু থাকবে, খাওয়া যাবে খাঁটি দুধ। সেখানে দু-একদিন বেড়ানোর ব্যবস্থাও থাকবে।
পপির ভাষায়, তার ভিডিও কনটেন্ট তৈরি ও ব্যবসা একই সূত্রে গাঁথা। কৃষিকাজ করলে কে কী ভাববে, এমন দ্বিধা কখনো মনে স্থান দেননি। তার মতে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা হলো কৃষিকাজ। তবে কৃষির প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে তিনি এই বিষয়ে ক্রমাগত শিখছেন। তিনি কৃষি বিষয়ক বই পড়ে সচেতনতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করছেন।
ব্যবসায়িক পরিচয়ে উম্মে কুলসুম পপি প্রিমিয়াম ফ্রুটসের চেয়ারম্যান আর তার জীবনসঙ্গী আবু সায়েদ আল সাগর হলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের প্রতিষ্ঠানে অনেকেরই কর্মসংস্থান হয়েছে, আবার কেউ কেউ প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেরাও পপির মতো সফল হবার স্বপ্ন বুনছেন।
পপির সাফল্য এবং নিজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে প্রিমিয়াম ফ্রুটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পপির স্বামী আবু সাইদ আল সাগর বলেন, আমরা আগামী পাঁচ বছরে ১০০ জন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে চাই বিডি অ্যাসিস্ট্যান্টে। প্রিমিয়াম ফ্রুটস থেকে নিরাপদ ফল নিয়েও কাজ করছি। তাছাড়া আস্তে আস্তে বিদেশের মতো আমরা প্রসেসিং ফুডেও যাব। সেই সঙ্গে রপ্তানিও করতে চাই নিরাপদ ফল। আমরা নতুন একটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছি। বলতে পারেন এটি আমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট। এখানে অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে চাই আমরা। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে মানুষ অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের সেবা নিতে পারবেন।
আরএআর