সুন্দরবনে সুপেয় পানির সংকট
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পশ্চিম সুন্দরবনের বন কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণীদের ৫৩টি মিষ্টি পানির পুকুর ভেসে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। এতে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য মাঠে নেমেছে বন বিভাগ। শনিবার (২৯ মে) সকাল ১০টায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল সুন্দরবনে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তিন দিন সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে কোনো বন্যপ্রাণীর ভেসে আসা বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তবে বন্য শূকরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈরী আবহাওয়া থাকায় গত দুই দিন সুন্দরবনের ভেতরে কাউকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে শনিবার সকালে তিন সদস্যের একটি দল সুন্দরবনে পাঠানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বনে কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা কোনো বন্যপ্রাণী মারা গেল কি না, তদন্ত করে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকার মধ্যে কোনো বন্যপ্রাণী ভেসে আসা বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
খুলনা বিভাগীয় (পশ্চিম বন বিভাগ) কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পশ্চিম সুন্দরবনে বন কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণীদের ৫৪টি মিষ্টি পানির পুকুরের মধ্যে ৫৩টি পুকুর ভেসে গেছে। খুলনার কয়রা ও বজবজা টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫টি ক্যাম্প ও স্টেশনের রাস্তা তছনছ হয়ে ভেসে গেছে। সুন্দরবনের মধ্যে আড়পাঙ্গাসিয়া ও রায়মঙ্গল নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। টাকার হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মোহসীন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শূকরের প্রজনন মৌসুম চলছিল। এখন পর্যন্ত কোনো বন্যপ্রাণির মৃত্যু বা ভেসে আসার খবর পাওয়া না গেলেও আশঙ্কা করছি শূকরের ক্ষতি হবে। শূকরগুলো হুমকিতে রয়েছে। বনের ভেতরের মিষ্টি পানির পুকুরগুলো ডুবে গেছে। এই পানি বন কর্মকর্তা, বনজীবী ও বন্যপ্রাণীরা পান করে থাকে। এখন মিষ্টি পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্চ এলাকার মধ্যে কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু বা ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন, বন্যপ্রাণীর কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না সেটি পরে জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৬ মে) বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা উপকূলে। এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তছনছ হয়ে যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল। বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে সাতক্ষীরা জেলার শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লক্ষাধিক মানুষ।
আকরামুল ইসলাম/এসপি