ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগরের পানির তোড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভাঙন ধরেছে। দু-একটি স্পটে এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভেঙে যাওয়া অংশ এখনই মেরামত করা না হলে ব্যাপক ভাঙনে মেরিন ড্রাইভ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সড়কের হিমছড়ি ও পাটোয়ার টেক পয়েন্টে এই ভাঙন দেখা গেছে। সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে জিও ব্যাগ ছিঁড়ে পাথর সরে গিয়ে ভাঙন ছুঁয়েছে সড়ক।

স্থানীয়রা বলছেন, পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক রক্ষাকবজ জিও ব্যাগ দুর্বল হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সড়কটিকে গ্রাস করছে সমুদ্র।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহমেদ বলেন, এর আগে কখনো এভাবে ভাঙন ধরেনি মেরিন ড্রাইভে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ৫-৬ ফুট উচ্চতার বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছিল মেরিন ড্রাইভে। জিও ব্যাগ টপকে ঢেউগুলো সড়কে উঠে এসেছিল।

হিমছড়ির বাসিন্দা নাজির হোসেন বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় জোয়ারের পানিতে কয়েক দফা ভেঙেছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এভাবে চলতে থাকলে বড় ভাঙনের সৃষ্টি হবে। তাই অস্থায়ী জিও ব্যাগ নয়, দেশের একমাত্র মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান।

পাটোয়ারটেক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শুধু হিমছড়ি পাটোয়ারটেক নয় বিচ্ছিন্নভাবে ১২০ কিলোমিটার সড়কের কয়েকটি স্থানে ভাঙন ধরেছে। অস্থায়ী সংস্কার এর সমাধান নয়। জরুরিভাবে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক রক্ষায় টেকসই রক্ষাকবজ তৈরি করা দরকার। দেশের একমাত্র মেরিন ড্রাইভ সড়ক এটি। সড়কটি যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এছাড়াও সড়ক রক্ষা করা না গেলে টেকনাফের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হবে। দুর্ভোগে পড়বেন হাজার হজার পর্যটক।

তবে সড়কটির দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ভাঙনের অংশে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তবে জোয়ারের কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ শুরু হলেও ১৯৯৪ সালে প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকল্পটি পুনরায় সেনাবাহিনীর ইসিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরই নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হয় প্রকল্পটির নির্মাণকাজ।

তিন ধাপে এ সড়কটির প্রথম পর্যায়ে কলাতলী থেকে ইনানি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইনানি থেকে শিলখালী পর্যন্ত আরও ২৪ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয় ২০১৬ সালের জুন মাসে। তৃতীয় পর্যায়ে শিলখালী থেকে টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয় ওই বছরের এপ্রিল মাসে।

তৃতীয় পর্যায়ে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া নির্মাণকাজের কার্যাদেশের শেষ সময় ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে কাজ শেষ হয়।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/আরএআর