সাতক্ষীরায় ভেসে গেছে ৪৫০০ ঘের, ডুবে গেছে ৬৩ গ্রাম
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির ১০টি ইউনিয়নের মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে এবং নদীর জোয়ারের পানি উপচে ভেসে গেছে সাড়ে চার হাজার মাছের ঘের। এতে সর্বস্বান্ত হয়েছেন মাছচাষিরা। এ ছাড়া জেলাব্যাপী প্লাবিত হয়েছে ৬৩টি গ্রাম।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের পর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করেছে জেলা মৎস্য অধিদফতর।
বিজ্ঞাপন
জেলা মৎস্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, কৈখালী, নুরনগর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে ৯৫০ হেক্টর জমির দুই হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। টাকার হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের ১৪৫০ হেক্টর জমির ২ হাজার ৫৬০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের পর উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে উপকূলীয় বাঁধ উপচে ও বাঁধ ভেঙে ৪৫৬০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাতের জোয়ারে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, আম্পানের চেয়েও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। বর্তমানে ঘেরের মাছগুলো সব বিক্রি উপযোগী হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে চাষিদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। আশাশুনিতে ক্ষতির পরিমাণ কমার কারণ হচ্ছে, সেখানে অনেক ঘের শুকনা ছিল। পানি-সংকটের কারণে চাষিরা আগেই মাছ ধরে নেয়।
বাঁধ ভেঙে মাছের ঘের ভেসে যাওয়া ছাড়া জেলার কোথাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপকূলীয় বাঁধ ভেঙে এবং পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। আশাশুনি উপজেলার নয়টি, কালিগঞ্জ উপজেলার ঘোজাডাঙ্গা, কালিগঞ্জ সদর, বাজারগ্রাম, নাজিমগঞ্জ, বসন্তপুর, হাড়দ্দহ গ্রাম, দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর, ভাতসালা, চর শ্রীপুর, টাউন শ্রীপুর, সুশিলগাতি, বসন্তপুর, নাংলা ও সখিপুর গ্রাম, শ্যামনগর উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোট ৬৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোথাও ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপকূলীয় বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সময় পানি সরে গেছে। বর্তমানে ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি আছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সব মিলিয়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলো, সেটি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি জানানো হবে।
আকরামুল ইসলাম/এনএ/জেএস