ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে বরগুনার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (২৬ মে) সকালে জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ মে) জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে পড়ে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার শতাধিক গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক পরিবার।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালীতে আজ ৩.৫৮ মিটার উচ্চতায় বিপৎসীমার ১২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ও রাতে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের লতাকাটা এলাকার বাসিন্দা সরোয়ার বলেন, মঙ্গলবার রাতে জোয়ারের চাপে আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। আর আজ সকালে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে এলাকার পাঁচ হাজারেরও বেশি পবিরার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে আউশ ধানের বীজতলাসহ বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ।

একই এলাকার নুরজাহান বেগম বলেন, রাতে জোয়ারের পানি ঘরের সব মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। রাতে যে বাড়ি থেকে বের হয়েছি এরপর আর ঘরে প্রবেশ করতে পারিনি। সকালের জোয়ারের পানি ছিল রাতের চেয়েও বেশি। গত পাঁচ বছরে আমাদের এখানে বেড়িবাঁধের ওপর এক ইঞ্চি মাটি কেউ দেয়নি। এ জন্যই আমাদের এই দুর্ভোগ।

বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের লবণগোলা এলাকার বাসিন্দা দুলাল মৃধা বলেন, আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাত হাজারেরও বেশি পরিবার।

সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা দুলাল বলেন, পায়রা নদীর জোয়ারের চাপে মঙ্গলবার সকালে আমাদের এলাকার অন্তত ৩০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। 

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম বলেন, আগে থেকেই বরগুনায় ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে এসব বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। আমরা এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য কাজ শুরু করেছি।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা মজুত আছে। ইতোমধ্যেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছি। তালিকা অনুযায়ী তাদেরকে সহায়তা করা হবে।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/আরএআর