নওগাঁয় ১৫০০ কোটি টাকার আম-বাণিজ্যের সম্ভাবনা
দেশে আম উৎপাদনে শীর্ষ জেলা নওগাঁয় শুরু হয়েছে আমপাড়া উৎসব। নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আম-বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে জেলার সাপাহার উপজেলায় গোডাউন পাড়া এলাকায় বরেন্দ অ্যাগ্রো পার্ক বাগানে আনুষ্ঠানিকভাবে আম পাড়া কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এছাড়া আমপাড়া উদ্বোধন উপলক্ষে সাপাহার উপজেলা সদরে আমচাষি ও বিপণনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
সভায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলেন, নওগাঁর আম স্বাদে ও গুণে খুবই ভালো। ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে থাকায় এই এলাকার আম দেশের বিভিন্ন বাজারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আম বলে বিক্রি হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নওগাঁ আম উৎপাদনে দেশের শীর্ষ স্থান দখল করেছে। আমের রাজধানী এখন নওগাঁ। ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও নওগাঁকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গণমাধ্যম ও প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তাঁরা।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরুর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঘোষিত সময় অনুযায়ী আম না পাকায় সেই সময় পিছিয়ে ২৫ মে করা হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ ও পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়াসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে সাপাহার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আমচাষি ও বিপণনকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন।
সভায় বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ, সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আম বাজারজাতকরণে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন সাপাহার উপজেলা আমচাষি সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, চাষিরা উপজেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন আড়তে আম বাজারজাত করার সময় আড়তের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া আমের ভরা মৌসুমে সাপাহার উপজেলা সদর আমের মোকামকে কেন্দ্র করে প্রধান সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় আম বিপণনে বিড়ম্বনার শিকার হন চাষিরা। আম বাজারজাতকরণের সমস্যা দূর করতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাপাহার উপজেলা আম আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে অন্যতম বড় আমের মোকাম নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদর মোকাম। প্রতিবছর এই মোকামকে কেন্দ্র করে কয়েক শ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়ে থাকে।
নওগাঁর আম স্বাদে ও গুণে খুবই উন্নত মানের। বিশেষ করে এই অঞ্চলের আম্রপালি ও ল্যাংড়া আম খুবই সুস্বাদু। অথচ নওগাঁর আম দেশের বিভিন্ন বাজারে চাঁপাই ও রাজশাহীর আম বলে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ আমের ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে নওগাঁ পিছিয়ে রয়েছে, এমনটা জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, নওগাঁর আমের ব্র্যান্ডিং করার জন্য গত বছর সুন্দর সুন্দর স্লোগান তৈরি করা হয়েছিল। এ বছরও স্লোগান তৈরি করা প্রয়োজন। আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা যাতে কোনো প্রকার হয়রানি শিকার না হন, সে ব্যাপারে পুলিশ সব সময় সচেষ্ট থাকবে।
এ ছাড়া আম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যাতে পরিবহন ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি না হয়, সে ক্ষেত্রেও পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমকে কেন্দ্র করে চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ওপরে বাণিজ্য হওয়ার আশা করা যাচ্ছে। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হন, সে ক্ষেত্রে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমের মোকামগুলোকে কেন্দ্র করে যানজটের যে সমস্যা তৈরি হয়, সেটা দূর করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সাপাহার উপজেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হতে যাচ্ছে। এটি তৈরি হলে আম সংরক্ষণাগার করা হবে। তখন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা আরও লাভবান হবেন। আম ব্যবসায়ীরা যাতে সহজ শর্তে ঋণ পান এবং ভরা মৌসুমে অধিক সময় পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া সূত্র অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৪ মেট্রিক টন হিসাবে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন।
শামীনূর রহমান/এনএ/এইচকে