ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়ণ কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে সাইক্লোন সেল্টার, দুটি মুজিব কেল্লা এবং স্কুল রয়েছে। প্রয়োজনে কলেজগুলোও ব্যবহার করা হবে। প্রস্তুত করা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে একসঙ্গে ২০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। 

আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে গবাদি পশু রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় প্রস্তুতিসভা করা হয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে সতর্ক করার জন্য বিভাগীয় পর্যায় থেকে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জুম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা থেকে নিজ নিজ এলাকার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতন করতে মাইকিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে বিপৎসংকেত পাওয়ামাত্র মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে পারেন।

এছাড়া দুর্যোগ এবং দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিদ্যুৎ বিভাগকে। এছাড়া আশ্রয়ণে মানুষ আশ্রয় নিলে বাড়িতে চুরি-ডাকাতির কারণে দুর্গত মানুষ যেন ক্ষতির মুখে না পরে সেজন্য টহল বাড়াতে পুলিশকে জানানো হয়েছে। 

বরিশাল বিভাগীয় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, বরিশাল বিভাগে ৩৩ হাজার ৪শ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবহাওয়া সংকেত ৪ নম্বর হলে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য তারা পতাকা উত্তোলন ও মাইকিং করবেন।

সোমবার রাত থেকে বরিশালে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে আকাশ। অব্যাহত রয়েছে হালকা বাতাস ও থেমে থেমে  মাঝারি বৃষ্টিপাত। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীসহ আশপাশের এলাকার সকল নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র উচ্চ পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার বলেন, বরিশাল নদী বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি যত নিকটবর্তী হবে ততই বৃষ্টি ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।

দক্ষিণাঞ্চলের সকল নদীর পানি বিপৎসীমায়

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম জানান, মঙ্গলবার (২৫ মে) বেলা ৩টা পর্যন্ত বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ২.৪৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ২.৫৫ সেন্টিমিটার ছাড়ালে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। ভোলার তেতুলিয়া নদীর পানির বিপৎসীমা ২.৯০ সেন্টিমিটার, প্রবাহিত হচ্ছে ৩.৩০ সেন্টিমিটার  উচ্চতায়। দৌলতখানের সুরমা/মেঘনা নদীর পানির বিপৎসীমা ৩.৪১ সেন্টিমিটার, প্রবাহিত হচ্ছে ৩.৮০ সেন্টিমিটার  উচ্চতায়। পিরোজপুরের কচা নদী বিপৎসীমা ২.৬৫ সেন্টিমিটার, প্রবাহিত হচ্ছে ২.১৩ সেন্টিমিটার  উচ্চতায়। বলেশ্বর নদীর বিপৎসীমা ২.৬৮ সেন্টিমিটার, প্রবাহিত হচ্ছে ২ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। বেতাগীর বিষখালী নদীর বিপৎসীমা ২.৬৮ সেন্টিমিটার, পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। পাথরঘাটার বিষখালী নদীর বিপদসীমা ২.৮৫ সেন্টিমিটার, পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১.৯০ সেন্টিমিটার  উচ্চতায়। মির্জাগঞ্জের বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর বিপদসীমা ২.৮১ সেন্টিমিটার হলেও প্রবাহিত হচ্ছে ২.২১ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। আমতলীর বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর পানি পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২.৮৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। ঝালকাঠির বিষখালী নদীর বিপৎসীমা ২.০৮ সেন্টিমিটার হলেও ২.০৭ সেন্টিমিটার  উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এইচকে