সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাগেরহাটে। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে অরক্ষিত লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।

জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল এলাকার সহস্রাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে নদ-নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীর তীরে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা সানকিভাঙ্গা ও বদনী ভাঙ্গা গ্রামের মিলন শেখ, জাকারিয়া হোসেন, মুক্তা বেগম, সালেহা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, সকালের জোয়ারে গতকালের থেকে দুই-তিন ফুট পানি বেড়েছে। আমাদের অনেকের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেছিল। পরে আবার নেমে যায়। তবে রাতের জোয়ারে পানি আরও বাড়লে বাড়িতে বসবাসের পরিস্থিতি থাকবে না।

শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী বগী, ভোলা নদীর তীরবর্তী  চরগ্রাম, পানিরঘাট, সোনাতলা এলাকায় অন্তত ৮ শতাধিক বাড়িঘরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। রাতে বৃষ্টি হলে ও জোয়ারের পানি আরও বাড়লে পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছেন গ্রামবাসীরা।

বাগেরহাটের ভৈরব নদীর পাশে মাঝিডাঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রসহ আশপাশের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরেও সকালের জোয়ার ও বৃষ্টির ফলে পানি উঠে যায়। মাঝিডাঙ্গা এলাকার মিজান শেখ বলেন, ভৈরব নদীর তীরে আমাদের এই গ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আমাদের পানিতে ডুবতে হয়।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণ জোয়ারে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি এখন বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা কম। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বাগেরহাটে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলোয় শুকনো খাবার মজুত এবং সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য জেলার স্থায়ী ৩৪৪টি ও অস্থায়ী ৬২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

তানজীম আহমেদ/এনএ