কালবৈশাখী কেড়ে নিল জমিলার শেষ আশ্রয়টুকু
কথাবার্তা অস্পষ্ট। কানেও শুনতে পান না। স্বামী গত হয়েছেন অনেক আগে। তারপর একমাত্র অবলম্বন সন্তানটি চলে গেল তাকে রেখে। একপ্রকার নিঃস্ব হলেন। তবু বেঁচে থাকার চেষ্টায় শুরু করেন ভিক্ষা। আপজন আর জমিজিরাত না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা সড়কের পাশে একটি ঘর করে দেন। সেখানেই বসবাস করতেন। কিন্তু কষ্টের জীবনে নেমে এল আরও কষ্ট। গত ১৬ এপ্রিল রাতে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী যেন সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে তার।
বলছিলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদি গ্রামের প্রতিবন্ধী মৃত গণি মিয়ার স্ত্রী জমিলা বেগমের (৬৫) কথা। ঝড়ে গাছপালা পড়ে তার শেষ অবলম্বনটুকু একটি ঘর হারিয়ে তিনি এখন অনিশ্চিত জীবন পার করছেন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে উপজেলার চকহলদি গ্রামে জমিলা বেগমের বাসায় গেলে দেখা যায়, ভেঙে পড়া গাছের একটি মুড়ির ওপর গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। আর চোখ দিয়ে ঝরছে অশ্রু। তবে তার এই কষ্ট দেখার মতো যেন কেউ নেই। কারণ, দীর্ঘদিন পরও কোনো সহায়তা না পেয়ে ভাঙা ঘরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন জমিলা। কোথায় যাবেন, কী করবেন― কোনো কিছুই তিনি জানেন না।
জানা যায়, প্রায় ২৫ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীসহ উপজেলার চকহলদি গ্রামে থাকছেন জমিলা বেগম। ৯ থেকে ১০ বছর আগে মারা যান তার স্বামী। কিছুদিন পর মারা যান তার সন্তানও। এরপর থেকে ভিক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। প্রতিদিন সকাল হলেই তিনি বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষা করতে। ফিরে আসেন সন্ধ্যায়। সড়কের পাশের যে ঘরটিতে থাকেন তিনি, সেটি করে দিয়েছিলেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
গত মাসের কালবৈশাখী এসে কেড়ে নিল তার সেই ঘরটিও। ভেঙে পড়ে সড়কের ধারে থাকা একটি বড় গাছ। ফলে সঙ্গে সঙ্গে দুমড়েমুচড়ে যায় তার ঘরটি। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। তিনি নিজে বেঁচে গেলও ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ঘরটি। তবে ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা ঘরেই থাকছেন জমিলা বেগম।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারিভাবে অনেক অসহায় মানুষ ঘর পেয়ে থাকেন। যার স্বামী নেই, সন্তান নেই, অন্যের করে দেওয়া ঘরে থাকেন, তাকে অবশ্যই সরকারি একটি ঘর দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে তার বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা করে দেওয়া উচিত।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মোতালেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সড়কের পাশে বসবাস করছেন জমিলা বেগম। একসময় থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরে আমরা সবাই মিলে সড়কের ধারে টিন দিয়ে একটি ঘর করে দিই। কিন্তু ঝড়ে তার ঘরটি ভেঙে যায়। এতে জীবনের ঝুঁকিয়ে থাকছেন তিনি। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, শারীরিক প্রতিবন্ধী জমিলাকে একটি ঘর দিলে ভালো হয়।
এলাকাবাসী আম্বিয়া খাতুন বলেন, জমিলার স্বামী নেই, সন্তান নেই। তিনি ভিক্ষা করে চলেন। এখন ঝড়ে তার ঘর ভেঙে গেছে। এখন তিনি কী করবেন, কোথায় যাবেন। সে জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অনেক অসহায়কে ঘর দিয়ে থাকেন, তাই জমিলাকেও একটি ঘর দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে তার বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা বাধার কার্ড করে দেওয়া দরকার।
কথা হয় জমিলার সঙ্গে। অস্পষ্ট ভাষায় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী নাই। সন্তানও ছোট থাকতে মারা যায়। আপনজন কেউ নাই, ঘরবাড়ি নাই। আমার কেউ খেয়াল রাখে না। খাইতে খুব কষ্ট হয় আমার। এখন পর্যন্ত না খেয়ে আছি আমি। এলাকাবাসীর কাছে ভিক্ষা করে খাই। যখন যার কাছে যা পাই, তা-ই নিয়ে খাই। কখনো আবার না খেয়েই থাকি। ঝড় এসে আমার ঘরটি ভেঙে দিছে। এখন আমি কই যাব, কার কাছে যাব?
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। যেহেতু গাছগুলো জেলা পরিষদের, বিষয়টি তাদের অবগত করা হয়েছে। তারা যদি সেটি কেটে না নেয়, তাহলে আমরা সেটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করব।
সেই সঙ্গে জমিলাকে ঘর করে দেওয়ার জন্য টিন থেকে শুরু করে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি তার ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মো. নাহিদ রেজা/এনএ