ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : ঘের বাঁচাতে মরিয়া মৎস্যচাষিরা
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যত ঘনিয়ে আসছে বাগেরহাটের মৎস্যচাষিদের শঙ্কা তত বাড়ছে। মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে ঘেরে অবস্থান করছেন চাষিরা। কেউ মাঠ থেকে মাটি কেটে ঘেরের বাঁধ উচু করছে, কেউ নেট দিচ্ছেন আবার কেউ ঘেরের পাটা ঠিক করছেন। জলোচ্ছ্বাস থেকে ঘেরের মাছ ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হয়েছে। বুধবার (২৬ মে) সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে উপকূলে।
বিজ্ঞাপন
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। চাষি রয়েছেন লক্ষাধিক।
সরেজমিনে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঝড় আসার আগ মুহূর্তে ঘের বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়ায় ঘেরচাষি মুশফিকুল ইসলাম রিতু বলেন, বড় ধরনের ঝড়-বন্যা হলে আমাদের ঘের বাড়ি সব তলিয়ে যায়। মাছ ভেসে যায়। শুনেছি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সিডরের মতো শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে। পানিও অনেক বাড়বে। তাই চারপাশে নেট দিয়ে শেষ চেষ্টা করছি, যদি আল্লাহ রহমত করে তবে হয়তো ঘের তলিয়ে যাবে না।
চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া বিলের মৎস্যচাষি জাহিদুর রহমান জানান, বুলবুল, আম্ফানের পর এবার আসছে ইয়াস। প্রতিটি ঝড়েই আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘেরে এখন মাছ ধরার সময়। এই সময় যদি ইয়াসের আঘাতে ঘের তলিয়ে যায় তবে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষদের পথে বসতে হবে।
ফকিরহাট কলকলিয়া এলাকার চিংড়িচাষি আতিয়ার শেখ বলেন, সিডর, আইলা, আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে আমরা টিকে থাকি। কিন্তু প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়। সরকারি কিছু সাহায্য পেলেও তাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যায় না। ২-১ দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস হবে শুনেছি। সারা রাত ঘেরেই ছিলাম। আমি গরিব মানুষ, নিজে নিজে যতটুকু পারি ঘেরের পাড় উঁচু করেছি।
বাগেরহাট জেলা চিংড়িচাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, প্রতিটি দুর্যোগে বাগেরহাটের মৎস্যচাষিদের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু সরকারি হিসেবে এসব ক্ষতির পরিমাণ কম বলা হয়। জেলার চিংড়িচাষিরা ঘের রক্ষার্থে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া দেখা ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকবে না। আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি, ঘেরগুলোকে যদি বিমার আওতায় আনা যায় তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জেলার ১৭শ হেক্টর ফসলি জমির পাশাপাশি সাড়ে ৪ হাজারের বেশি চিংড়ির ঘের পানিতে ভেসে যায়।
তানজীম আহমেদ/এসপি