অতিথি পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে যে গ্রামের

ভোরে সূর্যের আলো ফোটার আগেই জনেশ্বর দিঘীতে জড়ো হতে থাকে নাম না জানা হাজারো অতিথি পাখি। তাদের কলকাকলিতেই ঘুম ভাঙে গ্রামের মানুষের। সারাদিন দিঘীতে পাতানো বাঁশের ওপর বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় ফের উড়াল দেয় খাবারের খোঁজে। শীতের মৌসুমে প্রায় আট বছর ধরে একইভাবে নিশাচর এই পাখির বিচরণ জনেশ্বর দিঘীতে। এটি পাতি সরালি হাঁস নামেই সুপরিচিত। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি এখনো শুধু অতিথি পাখি হিসেবেই পরিচিত। পাখিগুলো রক্ষায় গ্রামের ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই খুবই সচেতন।

শীতের মৌসুমে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের মধ্য জয়পুর গ্রামে জনেশ্বর দিঘীতে দিনব্যাপী বিচরণ করে পাতি সরালি। এবারই নজর কাড়ে লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দাদের। প্রতিদিনই কেউ না কেউ পাখিগুলো দেখতে যায়। ছবি ধারণ করে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কঠোর সচেতনতা বেধ করে ঢিল মারার সুযোগ পায় না কেউ। ভুলেও কেউ ঢিল মারলে বকুনি দিতে সময়ক্ষেপণ করে না স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, পাতি সরালি স্বভাবে নিশাচর। রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায়। এ ছাড়া দিনে জলমগ্ন ধানখেত ও বড় জলাশয়ের আশপাশে দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। এরা গাছের ডালে চড়ে বসতে পারে এবং কখনো কখনো গাছের গর্তে বাসা করে। এদের দেহ বাদামি ও গলা লম্বা, ডানা যথেষ্ট চওড়া আর ওড়ার সময় শিষের মতো শব্দ উৎপন্ন করে। বড় সরালির মতো এর লেজের গোড়া হালকা নয়, খয়েরি রঙের।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মানুষ যখন ফজরের নামাজ পড়তে ওঠে। তখন পাখিগুলো আসতে শুরু করে। মূলত পাখিগুলোর কলকাকলিতে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে। এটা আসলে দারুণ ব্যাপার। এ পাখিগুলোর কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সেজন্য আমরা সবসময় সচেতন রয়েছি। ১৮০০ সালের পূর্বে জমিদার জনেশ্বরের নামে প্রায় ২ একর জমিতে দিঘীটি খনন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরনবী, শহীদ আহমেদ ও মো. সেকান্তরসহ কয়েকজন জানান, পাখিগুলো নিশাচর প্রকৃতির। সারারাত খাবার খেয়ে ভোরে সূর্য ওঠার আগে এ দিঘীতে এসে জড়ো হয়। সারাদিন তারা এখানেই থাকে। আশপাশের কেউই কখনো পাখিগুলোর কোনো ক্ষতি করে না। এগুলো রক্ষার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যারা পাখিগুলো দেখতে আসে, তাদের জন্য পরামর্শ-‘আপনারা দেখুন, ছবি তুলুন, তবে কেউ ঢিল মারবেন না। পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দেবেন না’।

দিঘীর ইজারাদার গোপাল দাস বলেন, দিঘীতে আমি মাছ চাষ করি। গত কয়েক বছর ধরে পাখিগুলো এখানে এসে বিশ্রাম নেয়। এতে আমি পুরো দিঘীতে বাঁশ ভাসিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া মাছের জন্য পানিতে যে ভাসমান খাবার দিই, সেই খাবার পাখিরাও খায়।

মধ্য জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র দে বলেন, পাখিগুলোর কেউ কোনো ক্ষতি করে না। এজন্য পাখিগুলো অবাধে দিঘীতে বিচরণ করতে পারে। পাখিগুলো রক্ষায় এখানে সবাই খুবই সচেতন।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, দিঘীটিতে অতিথি পাখির সমাগম আমি দেখেছি। এটি নান্দনিক দৃশ্য। প্রতিবছর অতিথি পাখিরা এখানে আসে। পাখি দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন ছুটে যায়। যদি পাখিদের সমাগম আরও সুরক্ষিত করা যায়, যথাযথভাবে অভয়ারণ্য করা যায়, তাহলে পাখির সংখ্যা বাড়বে। যারা পাখি দেখতে যাবেন তারা যেন স্বস্তি নিরাপত্তা পায় সে বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দিঘীটি সংস্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে। পাখিদের বিচরণ এবং আগমনকে কেন্দ্রে সেখানে একটি সুস্থ এবং সুন্দর বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠুক।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এএমকে