ছোট্ট শিশু ফাহিমের (৯) বড় ভাই ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৪) মামাবাড়ি গোপালপুরে বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফুয়াদের শরীরে রক্ত স্বল্পতার কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। যদিও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, রোগটি থ্যালাসেমিয়া নয়। গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের ঘটনা। তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় ফুয়াদকে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশে রওয়ানা হয় তার পরিবার।

যাওয়ার পথে সাভার পুলিশ টাউনের সামনে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ফুয়াদ ও তার পরিবারকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি। অ্যাম্বুলেন্সের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। এতে ফুয়াদ, তার বাবা ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী, মা মহসিনা ও খালা সীমা খন্দকার মারা যান। তবে অ্যাম্বুলেন্সের চালক জাহিদুল দগ্ধ হলেও কোনো রকমে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে বের হয়ে প্রাণ বাঁচান।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী ছিলেন ঘাটাইলের দেওপাড়া ইউনিয়নের ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে ফাহিম গোপালপুরে মামার বাড়ির এলাকায় একটি মাদরাসায় আবাসিকে থে কে হেফজ বিভাগে পড়তো। বড় ছেলে ফুয়াদ ভবনদত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়তো।

এদিকে ফাহিম মাদারাসার আবাসিকে থেকে পড়াশুনা করার কারণে ভাইয়ের অসুস্থতায় পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় যেতে পারেনি। গেলে হয়তো তাকেও নির্মমভাবে আগুনে পুড়ে মরতে হতো। তবে বাবা-মা ও ভাইকে হারিয়ে এতিম ফাহিমের এখন নিজ পরিবারের কেউ নেই।

নিহত ফারুক হোসেনের চাচাতো ভাই হাবীব সিদ্দিকী বলেন, ফাহিম তার পরিবারে এখন একা। কয়েকদিন তার চাচার কাছে থাকবে। চাচি শিউলী বেগম এতিম ফাহিমকে দেখাশোনা করছেন। এরপর তার মামার বাড়ি গোপালপুরে সেই মাদরাসার হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করবে।

নিহত ফারুক হোসেনের ছোট ভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড়। ইতালি প্রবাসী। বড় ভাই ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর বড় ছেলে ফুয়াদ মেধাবী ছাত্র ছিল। ৯ম শ্রেণিতে তার রোল দুই। ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী গোপালপুর উপজেলায় একটি মাদরাসায় হোস্টেলে থেকে হেফজ পড়ছে। ফুয়াদ হঠাৎ করেই কিছুদিন ধরে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। গত বুধবার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি গোপালপুরে বেড়াতে যায় ফুয়াদ। ওই দিন রাতে হঠাৎ করে বাথরুমে গিয়ে পড়ে যায়। পরে রাতে অ্যাম্বুলেন্সযাগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তার মা ও খালা। পথে হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফুয়াদের বাবা ফারুক সিদ্দিকী। রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।

উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার পুলিশ টাউনের সামনে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা যান। ঘাটাইলের ভবনদত্ত গ্রামের ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী, তার স্ত্রী মহসিনা সিদ্দিকী, ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৪) ও শ্যালিকা সীমা খন্দকার। সীমা খন্দকারের বাড়ি পার্শ্ববর্তী উপজেলা গোপালপুরে।

অভিজিৎ ঘোষ/এএমকে