মাকে ভয় দেখিয়ে নবজাতককে বিক্রি করে দিলেন ক্লিনিক মালিক
ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে দুই বেডের ক্লিনিক। ইউনিয়ন পরিষদের লাইসেন্স নিয়ে ক্লিনিকের বদলে খুলে বসেছেন নবজাতক বিক্রির প্রতিষ্ঠান। অসহায় গরিব দম্পতিকে ভুল বুঝিয়ে ও নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে সময়ের আগেই এখানে করা হয় ডেলিভারি। নবজাতক বাঁচবে না, অনেক টাকা খরচ করলেও বাঁচানো সম্ভব না। এমন সব ভয়ভীতি দেখিয়ে নবজাতককে কৌশলে নিয়ে বিক্রি করত এ চক্রটি। তবে পুরো চক্রটিই এবার পুলিশের জালে। আর পুলিশের একান্ত চেষ্টায় জন্মের ৮ দিন পর সন্তান ফিরে পেল সেই মা। এ ঘটনায় ক্লিনিকের ডাক্তার ও মালিকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জনকে।
সোমবার (২৪ মে) বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ।
বিজ্ঞাপন
এর আগে রোববার (২৩ মে) আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার রাজিয়া প্লাজার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্নস্থানে রাতভর অভিযান পরিচালনা করেন আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ, এসআই সুদীপ কুমার গোপ ও এসআই আসওয়াদুর রহমান। এসময় নবজাতক বিক্রয় চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে নবজাতকটি সিরাজগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেন তারা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কুমিল্লার মুরাদনগর থানার খোসগড় গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের ছেলে ক্লিনিকের ডাক্তার ও মালিক মোস্তফা কামাল (৩৯), টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার হাতরুড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে আবু হানিফ (৪০), নওগাঁর মান্দা উপজেলার বৈলশিং গ্রামের মৃত কুতুবউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে হানিফ বিন কুতুব (৪২), শরিয়তপুরের কাঁচিকাটা গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৯)। এছাড়া নবজাতক ক্রয়ের দায়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়া থানার নতুন দাতপুর গ্রামের মৃত বরাত আলীর ছেলে অয়েজুলকে গ্রেফতার করা হয়।
ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সূর্যপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও তার স্ত্রী শিখা বেগম (২৬)।
ভুক্তভোগী নবজাতকের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ১৭ মে আমার স্ত্রীর পেটে অনেক ব্যথা হয়। আমি ওই ক্লিনিকে গেলে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন। তাদের কথামতো আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, নবজাতক উল্টো হয়ে আছে মা ও শিশুর জীবন সঙ্কটাপন্ন। দ্রুত প্রসব করাতে হবে। ভুক্তভোগী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কথায় রাজি হলে তাদের এক নারী এসে পার্শ্ববর্তী ঘোষবাগ এলাকার একটি বাড়িতে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যায়। পরে সেই বাড়িতে তার ডেলিভারি হয় এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শিখা।
এরপরে ডাক্তার এসে বলেন, আমাদের মেয়ে খুব বেশি হলে ৩ দিন বাঁচতে পারে। ১৫ দিন বাঁচাতেও অনেক টাকার দরকার। এসব ভুল বুঝিয়ে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে যায়। পরে সন্তান ফেরত চাইলে তারা ৫৫ হাজার টাকা দাবি করেন।
নবজাতকের মা শিখা খাতুন বলেন, আমি গার্মেন্টসে হেলপার হিসেবে কাজ করি। আমি তো এত কিছু বুঝি না। উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মিলে আমার মেয়েকে সিরাজগঞ্জে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে থানায় খবর দিলে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে আনে পুলিশ।
আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমি এসআই সুদীপ কুমার গোপ ও এসআই আসওয়াদুর রহমান ওই ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত উপস্থিত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে নবজাতটিকে উদ্ধার করে তার প্রকৃত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মাহিদুল মাহিদ/এমএএস