যুগ্ম সচিব পরিচয়ে অভিনব কায়দায় সাইফুল ইসলাম নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকান থেকে স্বর্ণ কিনে টাকা না দিয়ে উধাও হওয়া প্রতারক আরাফাত রহমান সাহেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ( ৯ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের প্রিয়াংকা হাউজিং সোসাইটির ৯ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা পোস্টকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া।

গ্রেপ্তার আরাফাত রহমান সাহেদ নোয়খালী জেলার সোনাইমুড়ী থানার ৭ নম্বর ইউনিয়নের বজরা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ জানায়, ন্যাশনাল ব্যাংক ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলামের মোবাইলে প্রতারক সাহেদ তার নাম মো. জুলকার নয়ন এবং ব্যাংকের পরিচালক পরিচয় দেন। একইসঙ্গে ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। প্রতারকের মোবাইল নম্বর ও ছবির সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালকের মিল পেয়ে তিনি তথ্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে ব্যাংকের প্রতারক সাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। সেই আলোকে তিনি তার দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দেন। ওই সময় প্রতারকের সাহেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন সপরিবারে তিনি চাঁদপুরে এক বিয়েতে অংশগ্রহণ করবেন এবং তিনি একটি রেস্ট হাউজে রয়েছেন। ম্যানেজারকে বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেন এবং বলেন, অনুষ্ঠানে আসলে তাকে ডিসি এবং এসপির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন। কিছুক্ষণ পরে প্রতারক সাহেদ আবার ম্যানেজার সাইফুলকে ফোন দিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী কিছু স্বর্ণের গহনা কিনবে তার পরিচিত কোনো জুয়ালারি দোকান আছে কিনা। তিনি সরল মনে ব্যাংকের গ্রাহক মোজাম্মেল হক ও স্বর্ণ মহরার স্বত্বাধিকারী মো. নাজির আহম্মেদের কাছ থেকে স্বর্ণ কেনার পরামর্শ দেন। এরপরই প্রতারক সাহেদ ওই দোকানে গিয়ে ৩ ভরি ৯.৫ আনা ওজনের ৫টি স্বর্ণের চেইন ক্রয় করেন এবং টাকা পরিশোধ করার জন্যে তার ক্রেডিট কার্ড প্রদান করেন। ওই দোকানে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় দোকানের কর্মচারীকে তার গাড়িতে করে ওই রেস্ট হাউজে নিয়ে যায়। ওই কর্মচারীকে সেখানে বসিয়ে রেখে কৌশলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান প্রতারক সাহেদ। এ ঘটনায় ন্যাশনাল ব্যাংক ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি করেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, চাঁদপুর শহরের মহিলা কলেজ রোডের গোল্ডেন টাওয়ারে স্বর্ণ মহরা নামে একটি জুয়েলারি দোকানে যুগ্ম সচিব পরিচয়ে ৪টি স্বর্ণের চেইন প্রতারণা করে পালিয়ে যায়। পরে ন্যাশনাল ব্যাংক ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ ও ডিবি রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালায়। এ সময় তার বাসা তল্লাশি করে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা নগদ, বেশ ক'টি মোবাইল সেট, আইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ড সহ মালামাল উদ্ধার করে। প্রতারণা করে নেয়া স্বর্ণের চেইনগুলো সে বিক্রি করে দেয়।

তিনি আরও জানান, প্রতারক শাহেদ নিজেকে যুগ্ম সচিব আবার কখনো ব্যাংকের পরিচালক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে বিভিন্ন জেলা থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর ছাড়াও অন্য জেলায় মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা এবং আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

এআইএস