জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, একাত্তর যেমন আমাদের শিকড় হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি চব্বিশও আমাদের অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে সংবিধানে ঠাঁই পাবে। এত মানুষ রক্ত ও জীবন দিয়ে সংগ্রাম করে খুনি হাসিনাকে বিতাড়িত করে তার স্বামীর সংসারে পাঠিয়ে দিলেন। এইটা ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত কিনা। জুলাই-আগস্ট ২৪ এর অভ্যুত্থানের বিষটি একটি লিখিত আকারে থাকুক। এই ঘোষণাটা লিখিত আকারে সংবিধানে স্থান দেওয়া হোক। 

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে নরসিংদীর জেলখানার মোড়ে লিফলেট বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাত দফা দাবি সম্বলিত জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে এবং জনমত গঠনে নরসিংদীতে লিফলেট বিতরণ করা হয়। 

সারজিস আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের কথা পরিষ্কার করে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে। ১৯৪৭ সালের পাকিস্থানের আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।  

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক ও জনগণের সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। যে সংবিধান জনগণের কথা বলবে, সে সংবিধান থাকবে। যে ধারা জনগণের কথা বলবে না সে ধারাগুলো সংবিধানে থাকতে পারবে না।

সারজিস বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে নাগরিক পরিচয় প্রদান করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র প্রধান লক্ষ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা ছিল না, বরং গত ৫৩ বছরের বৈষম্য, শোষণ ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্যে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদেরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যাবে না। ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাগ করা যাবে না। পেশা দিয়ে ভাগ করা যাবে না। সবার সমান নাগরিক সুবিধা থাকতে হবে। একজন ভিআইপি সুবিধা পাবে অন্য জন পাবে না, তা আর হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পুরো দেশের সামনে ঘোষণা করতে হবে।

এ সময় সারজিস আলমের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে এই কর্মসূচিতে নরসিংদী ও শিবপুরের শত শত সমন্বয়ক শিক্ষার্থী-জনতা অংশ নেয়। পরে দিনব্যাপী নরসিংদীর শিবপুর, সদর, ইটাখলা, ভেলানগরসহ বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। 

তন্ময় সাহা/আরএআর