নিহতের স্বজনদের আহাজারি

রাত ৩টায় ফরিদপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন মরহুম হাজী কালু ভূঁইয়ার পরিবারের কয়েকজন সদস্য। সময় পেলেই তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরতে যান। এবার শীতেও ঘুরতে বের হয়েছিলেন। সকালের আলো ফোটার আগেই ফরিদপুর পৌঁছে খেজুরের রস খান তারা। খেজুরের রস খেয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথেই ঘটে নির্মম দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই আনন্দ রূপ নেয় বিষাদে।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তারা। আরও কয়েকজনের আসার কথা ছিল। তাদের দেরি হওয়ায় ফরিদপুর শহরের গেরদা থেকে মুন্সিবাজারের দিকে ঘুরতে যান তারা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গেরদা এলাকার রেলগেটে উঠতেই তাদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা লাগে ট্রেনের। এতে গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনজন। আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়ার পর আরও দুইজনের মৃত্যু হয়। মুহূর্তেই লাশ হলেন হাসিখুশি পরিবারের ৫ সদস্য। আর কয়েকজন জীবিত ফিরলেও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ শহরের ভূঁইয়াপাড়া এলাকার মরহুম হাজী কালু ভূঁইয়ার নাতনি সাজিয়া আফরিন সাজু, উম্মে মাহমুদা রিংকু, ফাহমিদা শারমীন মুন, মুনের স্বামী মামুন চৌধুরী লিটন ও নাত বউ আতিফা রহমান ভূঁইয়া। 

নিহত মুন ও লিটনের শিশু কন্যা তাজরিন এবং মাইক্রোবাসের চালক জিন্নাহ এ দুর্ঘটনায় আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাজরিনকে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর মাইক্রোবাসচালক জিন্নাহও ফরিদপুরের হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

নিহতদের স্বজন ফিরোজ আহমেদ বলেন, কালু ভূঁইয়ার ছেলে আবু সাঈদ একটি প্রাইভেট কার আর তার ভগ্নিপতি মামুন চৌধুরী লিটন তাদের ব্যক্তিগত মাইক্রোবাস নিয়ে সোমবার রাত ৩টায় ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন। ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় ঘোরার পর ফেরার পথে মাইক্রোবাস ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার শিকার হয়। একটি দুর্ঘটনা নিমিষেই সব শেষ করে দিল।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় মুন্সিবাজার রেলক্রসিংয়ে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেল সড়কে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে মাইক্রোবাসের । এতে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যান। বাকি দুইজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে রাতে নিহতদের মরদেহ নারায়ণগঞ্জ শহরের ভূঁইয়াপাড়ায় এসে পৌঁছালে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও নগরীর অনেকে ছুটে আসেন মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোক জানাতে। রাতেই পাইকপাড়া, মাসদাইর ও বন্দর কবরস্থানে নিহতদের মরদেহ দাফন করা হয় ।

মেহেদী হাসান সৈকত/আরএআর