দাম নেই, ক্ষেতেই নষ্ট করা হচ্ছে ফুলকপি
চাহিদার তুলনায় অধিক উৎপাদন হওয়ায় কপাল পুড়েছে চুয়াডাঙ্গার ফুলকপি চাষিদের। এতে চরম লোকশানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। এখন ক্ষেত পরিষ্কার করে অন্য সবজি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় হাজার বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। সবজি আবাদ করে উৎপাদন খরচের টাকাও উঠছে না কৃষকদের। হঠাৎ করে সবজির দামে ধস নামায় বিপদে পড়েছেন তারা। বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে ফুলকপি চাষিদের। ক্রেতা কম থাকায় অধিকাংশ সবজিই ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর চাহিদার তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় অধিক ফুলকপি আবাদ করেছেন কৃষকরা। ২০২৩ সালে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ৬২ হাজার ৩৯৯ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদন হয়। আর এই ২৩ সালের উৎপাদনকেই ২০২৪ সালে চাহিদা দেখানো হয়। ২০২৪ সালে ২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর ফুলকপির আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন ৭০ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় ৮ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদন হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের কৃষক সোনা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুলকপি কেনার মানুষ নেই। এবার অনেক বেশি উৎপাদন হয়েছে। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সব কপি। বাধ্য হয়েই ট্রাক্টর দিয়ে নষ্ট করেছি। পরবর্তী ফসলের জন্য মাঠ পরিষ্কার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার ১০ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রায় আমার তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমার। এখন উৎপাদন খরচই উঠছে না।
ছোটশলুয়া গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঋণ নিয়ে চার বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। গত বছরেও প্রতি বিঘা জমির ফুলকপি ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এবার চার বিঘা জমির কপি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। উৎপাদন খরচই উঠছে না। চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ঋণের বোঝা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।
দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালী গ্রামের সবজি চাষি খালিদ হাসান জানান, চলতি মৌসুমে গ্রামের মাঠে তিনি দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। এতে তার চারা, বালাইনাশক, সার, সেচ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তার আবাদকৃত ফুলকপি বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এতে তার চারা কেনার খরচও উঠবে না।
দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, বুকভরা আশা নিয়ে এবার দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি-বাঁধাকপি আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বাজার দর যেভাবে কমে গেছে তাতে করে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতি বছর এই সময় মাঠে মাঠে পাইকারি মহাজনরা ঘুরে ঘুরে কপি কিনতেন। এবার বহুদূর তাকিয়ে থেকে একটাও মহাজনের দেখা মিলছে না।
দামুড়হুদার বদনপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে একজন সবজি ব্যবসায়ীর (পাইকারী) কাছে এক লাখ টাকায় দরদাম করে কপি বিক্রি করি। চুক্তি মোতাবেক তিনি আমাকে ২৮ হাজার টাকা বায়না করেন। গত কয়েক দিন যাবত সবজির বাজার কমে যাওয়ায় তিনি আর কপি নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে আবার বায়নার টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। আমার ক্ষেতের সব কপি দিতে চাচ্ছি তার বায়নার টাকায়; তবুও নিতে চাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় মহাবিপদে পড়ে গেছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক চাষি প্রথমবার চাষাবাদ করে ভালো দাম পেয়ে অধিক মুনাফার আশায় আবারও দ্বিতীয়বার ফুলকপির আবাদ করেছেন। এ জন্য চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এখন দাম পাচ্ছেন না।
আফজালুল হক/আরএআর