ফরিদপুরে হাসনাত আবদুল্লাহ
সিন্ডিকেটের হাত বদল হয়েছে বলার জন্য আপনাদের ক্ষমতায় বসানো হয়নি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সময়ে বলে সিন্ডিকেট এক হাত বদলে আরেক হাতে গিয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই সিন্ডিকেট বদলে যদি এক হাত থেকে আরেক হাতে যায় এটা বলার জন্য আপনি সরকার হন নাই। বরং এই সিন্ডিকেটগুলো ভাঙার জন্য আপনাকে বসানো হয়েছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুরে ছাত্র সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ফরিদপুর জেলার উদ্যোগে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে ‘ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ এবং প্রক্লামেশন অব জুলাই রেভুলেশন’-এ জনআকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে এ ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি আমাদের পূর্ব প্রজন্মের যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তারা বিভাজনের রাজনীতির কারণে বছরের পর বছর ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়তে পারেনি। তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তারা যে জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন ঠিক সেই জায়গাটিতে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হয়েছিল। এই নেতৃত্বের যে হাল আমরা ধরেছিলাম পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আমাদের এই নেতৃত্বের হাল আমাদেরকে শক্তভাবে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, ৮ আগস্ট সরকার গঠন করার পর জানুয়ারির আজ ২০২৫ সালের ৬ তারিখ। এখনো পর্যন্ত কিন্তু আমরা দৃশ্যমান একটি বিচারও দেখি নাই। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের একটা বিচারও হয়নি। ২০১৪ সালের শাপলা হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ -এ নির্বাচনে যেভাবে কারচুপি করা হয়েছে সেগুলির এখন পর্যন্ত কোনো বিচার করা হয়নি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা যদি আমাদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চান অবশ্যই অবশ্যই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের এই বিচারগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন এখনো পর্যন্ত অনেকে আমাদের বিপ্লবকে মেনে নিতে পারে নাই। সে জন্য কিছুদিন পর পর আমরা দেখি বিচার বিভাগে ক্যু করা হয়, আমরা দেখি পুলিশে ক্যু করা হয়, আমরা দেখি আনসারে বিদ্রোহ হয়, আমরা দেখি সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়। আমরা সবাইকে বলতে চাই আপনারা রিয়েলিটি মাইনে নেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা একটা দীর্ঘ সময় ধরে বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে বেড়ে উঠেছি। আমাদের বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে রেখে আমরা জাতীয় ঐক্যে কখনো পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের পূর্বের যারা রাজনীতিবিদ রয়েছেন আমরা আপনাদের আহ্বান জানাবো আপনাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আপনাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সেগুলোকে আমরা তরুণ প্রজন্ম সম্মান জানাই। একই সঙ্গে আপনাদের আহ্বান জানাবো এই তরুণ প্রজন্মের যে আত্মবিশ্বাস, এ তরুণ প্রজন্মের যে অকুতোভয়, এই ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করার জন্য তাদের যে প্রত্যয় আপনাদের প্রজ্ঞার সাথে তাদের প্রত্যয়ের সম্মিলন ঘটাতে না পারেন, তাহলে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা ব্যর্থ হবো।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের আহ্বান জানাবো এই তরুণ প্রজন্মকে আপনারা স্বীকৃতি দিন। আপনারা যদি এই তরুণ প্রজন্মের ক্রোধকে, অকুতোভয় আত্মবিশ্বাসকে সম্মান না জানান, তাহলে ২৪ পরবর্তী যে বাংলাদেশ হয়েছে তা সুখকর হবে না।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, অতীতে ঢাকার মসনদে কে বসবে সেটি নির্ধারিত হতো দিল্লি থেকে। আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমরা দেখেছি নির্বাচনের আগে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে দিল্লিমুখী হতো। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে ঢাকার ক্ষমতায় কে বসবে সেটি দিল্লি থেকে নির্ধারিত হবে না।
তিনি বলেন, এই দেশ থেকে খুনি শেখ হাসিনার মতো সিন্ডিকেটের উৎখাত চাই। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর হস্তে এই সিন্ডিকেট ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করুন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৫ জানুযারির মধ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আপনাদের রক্তের স্বীকৃতি দিক। এই ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুনি হাসিনার বিচারের একটি স্পষ্ট বার্তা দিক। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভুলেশনে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক। সমাবেশে স্থানীয়দের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
জহির হোসেন/আরএআর