সখিপুর গ্রামের প্রতিটি ঘরে গড়ে উঠেছে বালা তৈরির কারখানা
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুর গ্রাম এখন পরিচিত ‘বালা গ্রাম’ নামে। গ্রামে ঢুকলেই সকাল থেকে শোনা যায় খটখট শব্দের প্রতিধ্বনি। পিতলের বালা তৈরির এই শিল্প শুধু গ্রামের গুটি কয়েক মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমই নয় বরং এটি গোটা গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র পাল্টে দিয়েছে।
উত্তর সখিপুর সাতক্ষীরা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারই বালা তৈরির সঙ্গে জড়িত। ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা। এখানকার কারিগররা পিতলের পাত পিটিয়ে, কেটে এবং হাতে খোদাই করা নকশায় তৈরি করছেন দৃষ্টিনন্দন সব বালা।
বিজ্ঞাপন
গ্রামের প্রতিটি পরিবার এখন বালা তৈরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। স্থানীয় কারিগর মো. রাসেল বলেন, আমি প্রতিদিন সকাল থেকে কাজ শুরু করে ৮-১০ জোড়া বালায় নকশা করতে পারি। এতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। গৃহিণীরাও এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। শিউলি বেগম বলেন, নিজের ঘরে বসে কাজ করে সংসারের খরচ মেটাতে পারছি, এতে আমাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বালা ঢাকার পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। তবে পণ্য পরিবহনের সময় সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বা পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে বর্তমানে নকশা করার পর রং ছাড়াই ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
গ্রামের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছেন মিজানুর রহমান। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনিই এই গ্রামে বালা তৈরির কাজ শুরু করেন। তার প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে এই কাজ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এখন এটি গ্রামের অন্যতম প্রধান পেশা হয়ে উঠেছে।
বিসিকের সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক গৌরব দাস বলেন, উত্তর সখিপুরের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং দারুণ সম্ভাবনাময়। আমরা খুব শিগগিরই গ্রামটি ভিজিট করব এবং শিল্প নিবন্ধনসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করব।
উত্তর সখিপুর থেকে প্রতিমাসে যে পরিমাণ বালা বিক্রি হয়, তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্তারা মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প আরও বিকশিত হবে এবং দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে বড় ভূমিকা রাখবে।
উত্তর সখিপুর এখন শুধু একটি গ্রাম নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতির মডেল। সময়ের সঙ্গে এই শিল্প আরও বিস্তৃত হবে, এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইব্রাহিম খলিল/আরকে