চাঁদা না দেওয়ায় এক ব্যক্তির বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ক্লাবের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একটি প্রভাবশালী চক্র। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাহের দিঘিরপাড় গ্রামে।

নড়িয়া থানায় করা সাধারণ ডায়েরি ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে আলাউদ্দিন গাইন নামে এক ব্যক্তি নড়িয়া পৌরসভার লোনসিং এলাকার বাহের দিঘির পাড়ে স্থানীয় সাইফুল ইসলাম ও বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ৫২ শতাংশ ফসলি জমি ক্রয় করেন। এরপর থেকে আলাউদ্দিন গাইন ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। জমি ক্রয়ের শুরু থেকেই জমির সামনের সড়কের পাশে শাপলা একতা যুব সংঘ ও রক্তদাতা ক্লাব নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছিল। ২০২৩ সালে ওই জমির ওপর আলাউদ্দিন গাইন চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করলে নড়িয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি এবং শাপলা একতা যুব সংঘ ও রক্তদাতা ক্লাবের সভাপতি আব্দুল মান্নান সরদার, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সরদারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ক্লাবটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে আলাউদ্দিন গাইনের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ক্লাব অন্যত্র সরিয়ে নিতে টাকা না দিলে ক্লাবের জন্য তাদের বাড়ির একটি অংশ দিয়ে দিতে হবে বলে চাপ প্রয়োগ করেন। ওই সময় বাড়ির মালিক আলাউদ্দিন গাইন জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করার পর প্রশাসনের সহযোগিতায় ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেন।

এরপর চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন ভবনটির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভবনটির একাংশ দখল করে ওই ক্লাবের নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন আওয়ামী লীগ ও ক্লাবের লোকজন। এসময় আওয়ামী লীগ ও ক্লাবের লোকজন বাড়ির মালিক ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। এ ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ভবনটির মালিক আলাউদ্দিন গাইনের ছেলে আমান উল্লাহ জীবনের নিরাপত্তা ও আইনী সহযোগিতা চেয়ে নড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

অভিযোগকারী আমান উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ব্যবসায়িক কারণে ঢাকায় থাকি। ২০২৩ সালে পৌরসভার অনুমতি ও সব বিল্ডিং কোড মেনে আমাদের নিজস্ব জমিতে ৪ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করি। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্লাবের সভাপতি মান্নান সরদার আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে অথবা আমাদের ব‍্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে দোকান লিখে দিতে হবে বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি না মানলে নির্মাণকাজ করতে দেবে না বলেও হুমকি দিয়েছে। ওই সময় আমার বাবাকে জিম্মি করে জোরপূর্বক একটি চুক্তিপত্র করে রাখে। এখন আবার আওয়ামী লীগ সভাপতি মান্নান সরদারের নেতৃত্বে আমাদের ভবনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ক্লাবের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। ক্লাবের জন‍্যে দোকান লিখে না দিলে আমাদের পরিবারের ক্ষতি করবে। আমরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে না পেরে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

শাপলা একতা যুব সংঘ ও রক্তদাতা ক্লাব এবং নড়িয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান সরদার বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় রাস্তার পাশে জমিতে অনেক বছর যাবৎ ক্লাবটি করেছি। ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভবন নির্মানের সময় ক্লাবের নামে ১৫০ বর্গ ফুটের একটি রুম দেওয়ার কথা বলেছিল বাড়ির মালিক আলাউদ্দিন গাইন। আমাদেরকে ওই রুম না দেওয়ায় দেয়ালটি ভেঙে ক্লাবের সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। আমরা তাদের বাড়ি দখল করিনি। কোনো চাঁদা দাবি করিনি। কাউকে হুমকিও দেইনি।

নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দখল সংক্রন্ত বিষয়ে আমান উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাইফ রুদাদ/আরকে