পুলিশকে আহত জুয়েলের তথ্য, জাহাজে ছিল ইরফান নামের আরও এক ব্যক্তি
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে জাহাজে ৭ জনের হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জুয়েল নামে জাহাজের এক কর্মী আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে জাহাজ মালিকের পক্ষে ঢাকার দোহার এলাকার মো. মাহবুব মোরশেদ বাদী হয়ে হাইমচর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় খুন ও ডাকাতির অভিযোগ এনে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ওই জাহাজে ৯ জন স্টাফ ছিল বলে জানিয়েছেন নৌ পুলিশের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, জাহাজ থেকে মৃত অবস্থায় ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় ৩ জনকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন মারা যায়। পরে তাদের মধ্যে আহত জুয়েলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি জাহাজে ৮ জন ছিল। পরে আমাদের অফিসাররা তদন্ত এবং আহত জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জুয়েলের গলাকাটা থাকায় সে কথা বলতে পারেনি। তাই ঘটনার বিবরণও নেওয়া যায়নি। সে সুস্থ হলে ডাকাতদলকে দেখলে চিনবে বলে ইশারায় জানায়। তবে জুয়েলের সঙ্গে ইরফান নামে আরেকজন ছিল বলে সে লিখে জানায়। এ ঘটনায় ইরফানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাটের পশ্চিমে মেঘনা নদীর পাড়ে হাইমচর উপজেলার মাঝিরচর এলাকায় থেমে থাকা একটি জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে আরও দুইজন মারা যান। আহত জুয়েলকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২৩ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার যেকোনো সময়ে ঈশানবালার মনিপুর টেক খাল পাড় সংলগ্ন এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটে। এর আগে এমভি আল বাখেরা কার্গো জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার সময় চট্টগ্রামের অগ্রাবাদের সমতা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং এজেন্সির হিসাবরক্ষক টিপুর কাছ থেকে জাহাজের কর্মচারীদের খোরাকি বাবদ নগদ ৩০ হাজার টাকা নেন। পরে গত ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় কার্গো জাহাজ ‘এমভি আল বাখেরা’ চট্টগ্রাম কাফকো জেটি থেকে ইউরিয়া সার বোঝাই করে ৯ কর্মচারী নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার বাঘাবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটের সময় এমভি আল বাখেরার নাবিক সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জাহাজের অবস্থান হাতিয়া পাড় হয়ে চরগজারিয়ার কাছে থাকার খবর পায়। পরের দিন অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় খবর নিতে গেলে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পেলে এ ঘটনা ধীরে ধীরে সামনে আসে।
আরও উল্লেখ করা হয়, আহত জুয়েলের গলায় জখম থাকায় কথা বলতে না পারায় ডাকাত দলের বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারেননি। তিনি সুস্থ হলে ডাকাত দল দেখলে চিনবেন বলে ইশারায় জানান। তবে জুয়েল জাহাজে ৯ জন ছিল বলে লিখে জানান। ৯ম ব্যক্তির নাম ইরফান। তবে তার ঠিকানা দিতে পারেননি।
ঘটনার পর পুলিশ ওই জাহাজ পরিদর্শনের সময় একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দুটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সিল, একটি হেডফোন, একমুঠো ভাত ও এক টেবিল চা-চামচ জব্দ করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
নিহত সাতজন হলেন- নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এগারনলি এলাকার আবেদ মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন (৪০), একই উপজেলার পাংখারচর উত্তর এলাকার মাহবুবুর রহমান মুন্সীর ছেলে আমিনুর মুন্সী (৪১), ফরিদপুরের কোতোয়ালি উপজেলার জুয়াইর এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), একই এলাকার মৃত আতাউর রহমানের ছেলে শেখ সবুজ (২৭), মাগুড়ার মোহাম্মদপুর উপজেলার চর বসন্তপুর এলাকার আনিছ মিয়ার ছেলে মো. মাজেদুর (১৮), একই উপজেলার পলাশবাড়িয়ার দাউদ হোসেনের ছেলে মো. সজিবুল ইসলাম (২৯) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন মুন্সীর ছেলে রানা কাজী (৩২)। তারা সবাই জাহাজের স্টাফ।
আনোয়ারুল হক/আরকে