বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের মালিক বনে গিয়েছিল। আর দেশের মানুষকে অর্থাৎ আমাদের সবাইকে ভাড়াটিয়া মনে করেছিল, যার কারণে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা ও হেফাজতে ইসলামের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর জামায়াতের ওপর হাত দিয়েছিল। তাদের খুন, গুম ও ধর্ষণের সীমা ছাড়িয়েছিল।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুরের মিঠাপুকুর কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগ ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছে দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, বিচারের আসনে বসে তারা রাজনীতি চর্চা করেছে। সাঈদী সাহেবকে (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) উদ্দেশ্য করেও কালা মানিক (বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) হুংকার দিয়েছিলেন। শেষমেষ নিজে ভারত পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। আমাদের কোনো দিদিবাড়ি নাই, মামাবাড়ি নাই। পালানোর প্রয়োজন নাই।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সহ্য করতে পারে না বলেই আয়নাঘর বানিয়ে গুম ও খুন শুরু করেছিল। তারা কোনো মানুষকে সম্মান দিতে শিখেনি। খালেদা জিয়ার মতো একজন প্রবীণ মানুষকেও তারা জেলে রেখেছিল। শহীদ আবু সাঈদকে গুলি করা হয়েছে। তার প্রত্যেক ফোঁটা রক্ত কথা বলছে। যুবকরা রাস্তায় নেমেছে, বলেছে ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, তাদের পথ ধরে রাস্তায় নেমেছিল লাখ লাখ যুবক-যুবতী। ১০ মাসের শিশু নিয়ে মাও এসেছিলেন রাস্তায়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, যা বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের ৫ গুণ। আমরা এমন এক দেশ চাই যে দেশে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। দুর্নীতি-টেন্ডারবাজি থাকবে না। এই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেককে সম্মান করবে। যে দেশে আমার মায়েরা ইজ্জতের সঙ্গে, নিরাপত্তার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে। আমরা জোর করে নারীকে বোরকা পরাবো না। এ সমাজে অনেক অমুসলিমও আছে।

দেশের সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে দেশের সকল মানুষকে সমান অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল জামায়াত ক্ষমতায় গেলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের কচুকাটা করবে। কী নির্জলা মিথ্যা প্রচারণা তাদের। কেন আমরা তাদের কচুকাটা করব? তাদেরকে কচুকাটা করার জামায়াত কে? বরঞ্চ এই জিজুর ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ ৫৩টি বছর সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে চাই, যতই ষড়যন্ত্র হোক, সংখ্যালঘুদের জন্য সবার আগে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করবে।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা আমাদের মজলুম নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আহ্বান করে বলেছিলাম, দুঃখ-কষ্ট বুকে চাপা রেখে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ান। দেশকে রক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ, দেশবাসী দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। ইনশাল্লাহ, এই দেশ সামনে এগিয়ে যাবে আর কেউ রশি দিয়ে পেছনে আটকে রাখতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে দিতে চাই। তরুণরা আগামীর বাংলাদেশের চালক হবে ইনশাআল্লাহ। মুরুব্বিরা মন খারাপ করবেন না। আমাদের সন্তানরা যদি সুন্দরভাবে দেশ চালায় তাহলে সব থেকে বেশি খুশি হব আমরা মুরুব্বিরা। আপনারাও খুশি হবেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের আমির আসাদুজ্জামান শিমুলের সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল্লাহ হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো. এনামুল হক, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা আমির জয়নাল আবেদীনসহ রংপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রশিবিরের নেতারা।

এর আগে জামায়াতের আমির পীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভা এবং গাইবান্ধায় জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ