মেহেরপুরের গাংনীর আড়পাড়া গ্রামের মৃত জব্বার আলীর ছেলে রবকুল (৭৫) এবং একই গ্রামের নাসিরের স্ত্রী মোছা. মুর্শিদা খাতুন (৫৫) জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারেন তারা মৃত। রোববার (২৩মে) বেলা ১১টার দিকে গাংনী উপজেলা নির্বাচন অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী মুর্শিদা খাতুন (এনআইডি নং ৫৭১৪৭২১৩৭৬৩৩১) জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছেন। বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে বিধবা ভাতা পওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হন। এ জন্য তার নামে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট করতে হবে। বিকাশ অ্যাকাউন্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। রোববার সকালে নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে গেলে অফিসের লোকজন জানায়, আমার নামের কার্ড বাতিল করা হয়েছে। 

অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্যে আমাকে মৃত বলা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া আমরা সিম কার্ড পাচ্ছি না। আমি জীবিত থাকা সত্ত্বে মৃত বলা হচ্ছে। এ কারণে ভাতার টাকা পাচ্ছি না। আমরা গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ। এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?

একই কথা জানান আরেক ভুক্তভোগী রবকুল। তিনি বলেন, আমার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে। বিকাশ অ্যাকাউন্ট করতে সিম কার্ড দরকার। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া সিম কার্ড পাওয়া যায়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে নির্বাচন অফিসে এসে জানতে পারলাম আমি মারা গেছি। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না। তথ্য সংগ্রহকারীরা কিভাবে যাচাই না করে এমন ভুল তথ্য দিয়েছেন বুঝতে পারছি না।

একই সমস্যায় পড়েছেন কোদাইল কাটি রাজাপুর গ্রামের ৭১ বছর বয়সি মুনসুর আলী। নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী তিনি মৃত। বয়স্ক ভাতার অ্যাকাউন্ট করতে তারও জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে।

ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান বলেন, এমন বেশ কয়েকজন আমার কাছে এসেছিলেন। সমস্যা হয়েছে তথ্য সংগ্রহকারীদের ভুলে। তবে ভুক্তভোগীদের বিষয়টি বিবেচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহকারী বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়। তাছাড়া গ্রামের মানুষ বিষয়টি প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্বহীন ভেবে ভুলভাল তথ্য প্রদান করেন। যখন বিপদে পড়েন তখন তথ্য সংগ্রহকারীদের দোষারোপ করেন।

গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) জন্য যারা তথ্য সংগ্রহ করেন তাদের ভুল। এমন সমস্যা কয়েকজনের নয়। মুজিবনগর উপজেলায় এমন সমস্যায় পড়েছেন সাতজন, গাংনী উপজেলায় ৯ জন। তবে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এসপি