রাত পোহালেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। চারদিকে উৎসব-উৎসব আমেজ। নানা আয়োজনে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন পালন করবেন তারা। তাই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। 

বড়দিন উপলক্ষে গির্জা, বাড়িঘর সাজানো হচ্ছে রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে। পার্বত্য জনপদ রাঙামাটির খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরাও প্রস্তুত বড়দিন উদযাপনে।

সরেজমিনে রাঙামাটির বিভিন্ন গীর্জা ঘুরে দেখা যায়, খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন ঘিরে এখন শেষ পর্যায়ের ব্যস্ততা চলছে। ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা, কীর্তনসহ আরো নানান আনুষ্ঠানিকতায় পালন করা হবে এই দিনটি। দিনটি ঘিরে উৎসবমুখর এখন খ্রিস্ট পল্লী। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন হিসেবে ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করেন খ্রিস্টানরা।

জেলার কেন্দ্রীয় গির্জা সেন্ট যোসেফ চার্চে চলছে বড়দিন আয়োজনের ব্যস্ততা। গির্জা সাজানো হয়েছে রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে। প্রার্থনা সভা, যিশুর জন্মস্থান প্রতিকী গোয়ালঘর তৈরি, ক্রিসমাসট্রি, বেলুন আর বাহারি রঙিন কাগজে সাজিয়ে জাঁকজমকভাবে যিশুর জন্মদিন পালনের আবহে তৈরি করা হচ্ছে গির্জাগুলো। গির্জাগুলোতে প্রার্থনা, কেক কাটার পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে চলবে অতিথি অ্যাপায়ন।

রাঙামাটির কেন্দ্রীয় গির্জা সেন্ট যোসেফ চার্চের সেক্রেটারি সিমন ত্রিপুরা বলেন, বড়দিন মানেই আমাদের ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদাতা যীশু খ্রিস্টের আগমন। এই আগমনকে কেন্দ্র করে আমরা বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি যাতে আমরা সবার সঙ্গে ভালোবাসা বিনিময় করতে পারি। বড়দিন উপলক্ষ্যে আমরা বেশ কয়েকদিন প্রার্থনারত ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য হলো দেশ ও প্রতিবেশির শান্তির জন্য প্রার্থনা করা।

শহরের আসামবস্তী নির্মলা মারিয়া গির্জা ও রাঙামাটি ধর্মপল্লীর কার্টিকিস্ট (খ্রিস্টান ধর্মের নীতির একজন শিক্ষক) স্যামুয়েল আসাম বলেন, বড়দিন উপলক্ষ্যে আমরা আমাদের বাড়িঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করি এবং সাজাই। বড়দিনের দিন আমরা কীর্তন এবং উপাসনা করি, কেক কাটি এবং বাড়িতে অতিথিদের আপ্যায়ন করি। বড়দিনের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে আমাদের নানান আয়োজন থাকে।

রাঙামাটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পুর্ণার্থী আকাপ পাংখোয়া বলেন, এই দিনে প্রভু যীশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে এসেছেন সব জীবের কল্যাণের জন্য। তার এই আগমনকে বরণ করতে আমরা সারারাত কীর্তন ও প্রার্থনা করি। পাশাপাশি দিনটি আনন্দের সঙ্গে উদযাপনের জন্য আমরা সবার বাড়ি বাড়ি যাই, খাওয়া দাওয়া করি ও নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই।

বড়দিন আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক দুই ধরনের শিক্ষা দেয় জানিয়ে সেন্ট যোসেফ গির্জার প্রধান পুরোহিত ফাদার মাইকেল রয় বলেন, আমরা বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আধ্যাত্মিকভাবে আমরা দীর্ঘ একটি মাস ধ্যান প্রার্থনা করেছি। আমরা আমাদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দেশ, জাতি ও সবার মঙ্গল কামনা করেছি। পাশাপাশি বাহ্যিক প্রস্তুতি হিসেবে আমরা গির্জা, বাড়িঘর সাজিয়েছি। প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমনের যে আনন্দ তা সবার মাঝে ছড়িয়ে যাবে এটাই প্রার্থনা করি।

তিনি আরও বলেন, বড়দিন আয়োজনে আমরা আগে কখনো আশঙ্কা বোধ করিনি, এবারও করছি না। রাঙামাটিতে খুব সুন্দর ও আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২৪ তারিখ রাত থেকে শুরু হবে বড়দিনের প্রার্থনা। যিশুখ্রিস্টের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয় প্রার্থনায়। একই সঙ্গে সবার জন্য শান্তি ও আনন্দের বার্তা দেওয়া হয়।

মিশু মল্লিক/আরকে