চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা স্বাস্থ্যকর্মী (ওয়ার্ডবয়) ও নার্সদের হেনস্তা ও তাদের সঙ্গে মারমুখি আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফারুক হোসেন (৬০) নামে এক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। হাসপাতালে ভর্তির ১৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয় ওই রোগীর।  

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা অভিযোগ করেন, মৃতের ছেলে হৃদয়সহ স্বজনরা নার্স ও ওয়ার্ড বয়ের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোমানা পারভীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীকে তার স্বজনরা ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে বলেন অক্সিজেন দিতে। আমরা রোগীকে ওয়ার্ডের মধ্যে নিয়ে আসার অনুরোধ করি। কারণ, বাইরে ওয়ার্ডের বাইরে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে আমাদের গালিগালাজ করে রোগীর স্বজনরা। ওয়ার্ডবয়কে কলার চেপে হেনস্থা করে। উত্তেজিত স্বজনরা আমার ও সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমুন নাহারের মুখে ফাইল ছুঁড়ে মারে এবং আমাদের ওপর চড়াও হন তারা। এরপরই আমরা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে জরুরি বিভাগে চলে আসি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। অকারণে আমরা লাঞ্ছিত হচ্ছি। বিচারের দাবিতে আজ থানায় অভিযোগ করেছি। এরপরই নার্সরা কর্মবিরতিতে যান। পরে হাসপাতালের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করলে ১ ঘণ্টা পর নার্সরা ডিউটিতে যোগদান করেন।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোর্শেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে রোগীটিকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওয়ার্ডে পাঠানো হলেও চিকিৎসা শুরুর পরপরই তার মৃত্যু হয়। তবে জরুরি বিভাগে রোগীকে নেওয়ার পর থেকে স্বজনরা আমাদের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি ও মারমুখী আচরণ করতে শুরু করেন।  

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ ঘটনায় নার্সদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। রোগী ও স্বজনদের আচরণ হাসপাতালের শৃঙ্খলা বিনষ্ট করেছে। আমরা ঘটনাটির তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি করছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নার্সদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করা হবে।’ 

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হোসেন আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই আমি হাসপাতালে উপস্থিত হই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি জিডি করেছেন। তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

আফজালুল হক/এনএফ