ফেনীতে সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে বিএনপির কমিটি, আহ্বায়ক বললেন— অবৈধ
ফেনী জেলা বিএনপির আওতাধীন সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে এ দুই উপজেলার চার ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর বিকেলে তা প্রত্যাহারের দাবিতে দুই উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিন কমিটি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের একক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি এবং কমিটির বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের বিপরীত বক্তব্য দীর্ঘ সময় পর ঘোষিত এসব কমিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ধূম্রজাল’।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে জয়নাল আবদীন বাবলুকে আহ্বায়ক, জামাল উদ্দিন সেন্টুকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সৈয়দ আলম ভূঞাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সোনাগাজী পৌর বিএনপির কমিটিতে মঞ্জুর হোসেন বাবরকে আহ্বায়ক, এয়াছিন কমিশনার যুগ্ম-আহ্বায়ক ও নিজাম উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলা কমিটিতে আকবর হোসেনকে আহ্বায়ক, মাহমুদুল হক মাদুকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও কামরুল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়। দাগনভূঞা পৌর বিএনপির কমিটিতে শফিকুর রহমান বাবুলকে আহ্বায়ক, সাইফুর রহমান স্বপনকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও হুমায়ুন কবীর বাবুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই জেলা বিএনপির আওতাধীন এসব ইউনিটের কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন ছিল। তারপর আকস্মিক জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের একক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি ঘোষণা, কমিটি নিয়ে জেলার অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করা, ত্যাগী ও বিগত সরকারের সময়ে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করায় দলের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এয়াকুব নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠনের জন্য আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দুজনেরই স্বাক্ষর প্রয়োজন। এছাড়া বিএনপির রাজনীতিতে সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদক সুপারিশ করবে আহ্বায়ক বা সভাপতি অনুমোদন করবে। এ কমিটির ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। সেজন্য এ কমিটির গ্রহণযোগ্যতাও নেই।
এদিকে ঘোষিত এ কমিটিকে অবৈধ বলে দাবি করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী যুগ্ম-আহ্বায়কসহ অন্যান্যদের মতামতের ভিত্তিতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষরে কমিটি গঠন করা হয়। একক স্বাক্ষরে কমিটি গঠনের কোনও সুযোগ নেই। বিষয়টি অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। উপর মহলের একটি নির্দেশনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির কোনও ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও এটি অবৈধ। এটিকে কমিটি বলা যাবে না। ত্যাগী-নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এমন কমিটি কেউ মেনে নেবে না।
গঠিত নতুন কমিটিতে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জামাল উদ্দিন সেন্টু বলেন, কমিটি অনুমোদনের জন্য আহ্বায়কের স্বাক্ষর প্রয়োজন। এ কমিটি গঠনতন্ত্র বহির্ভূত, অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ।
কমিটিতে একক স্বাক্ষর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংগঠনিক বিভাগীয় টিম প্রধান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের নির্দেশনায় এসব কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি অন্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন
এ ব্যাপারে কথা হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক বিভাগীয় টিম প্রধান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, তিনদিনের মধ্যে পুরো আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে আসার জন্য এ সংক্ষিপ্ত কমিটি দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় আহ্বায়ক, সদস্য সচিব দুজনই স্বাক্ষর করবেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়কের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এ বিষয়ে জানা নেই। আহ্বায়ককে ফোনে পাইনি, তখন সদস্য সচিবকে এ কমিটি গঠন করতে বলেছি।
তিনদিনের জন্য কমিটি ও একক স্বাক্ষরে গঠিত কমিটির সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা আরও বলেন, এটি কোনও স্বাক্ষর না। পুরো কমিটি গঠন করার জন্য তিনজনকে দায়িত্ব দিয়ে শুধু একটি মার্কিং (চিহ্নিত) করে দেওয়া হয়েছে। এটিকে কোনও অনুমোদন বলা যাবে না, আহ্বায়কের শট (সংক্ষিপ্ত) কমিটি বলতে পারেন।
এদিকে বিকেলে দাগনভূঞায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় বাজারের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
একইসময় সোনাগাজী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাহারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তারেক চৌধুরী/টিএম