তথ্য মেলায় মুজিববর্ষের লিফলেট, শেখ হাসিনার বাণী প্রচার!
রংপুরে আয়োজিত তথ্য মেলায় সরকারি চারটি দপ্তরের স্টলে মুজিববর্ষের লিফলেট ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য-সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এসব লিফলেট ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে স্টল থেকে লিফলেটগুলো সরিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে দুই দিনব্যাপী তথ্য মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তথ্য মেলায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি, জেলা মৎস্য দপ্তর, জেলা সঞ্চয় অফিস ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্টলে মুজিববর্ষের লিফলেট ও শেখ হাসিনার বক্তব্য-সংবলিত লিফলেট রাখা হয়। মেলা উদ্বোধনের পর তা দর্শনার্থীদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মেলা প্রাঙ্গণে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে এসব স্টল থেকে লিফলেটগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বাণী প্রচার করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও পীরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কাওসার আলী বলেন, ভুলবশত এসব লিফলেট আনা হয়েছে।
বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে রংপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা এনামুল হক বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা সরিয়ে ফেলেছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল মেলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তিনি জানার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ডেকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ‘তথ্যই শক্তি জানব জানাবো, দুর্নীতি রুখবো’ স্লোগানে শুরু হওয়া এই তথ্য মেলায় ৩৩টি সরকারি দপ্তর ও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৩৫টি স্টল অংশ নিয়েছে। বিকেলে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রংপুর সভাপতি ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন, তথ্য গণতন্ত্রের প্রাণ। তথ্যের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। জনগণের ক্ষমতায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন সংহতকরণে সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে।
তথ্য প্রবাহের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে দপ্তরের তথ্য যত বেশি উন্মুক্ত, সেই দপ্তর তত বেশি স্বচ্ছ। সরকারি-বেসরকারি সব দপ্তরের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশ করতে হবে, যাতে সেবাগ্রহীতারা ওয়েবসাইট ভিজিট করে তাদের যাচিত তথ্য পেতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবায় জনগণের তথ্য প্রাপ্তির নিশ্চিতকরণে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, তথ্যমেলা ২০২৪ বাস্তবায়ন কমিটি সনাকের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এএএম মুনীর চৌধুরী, টিআইবির কো-অর্ডিনেটর মো. আতিকুর রহমান, ইয়েস গ্রুপ সনাকের ছাত্র প্রতিনিধির সহ-দলনেতা তাসলিমা আক্তার মিম প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে মেলায় বিভিন্ন দপ্তরের সেবা প্রদান প্রক্রিয়া বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে