রংপুর জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অনেকেই লটারিতে নির্ধারিত হওয়ার পরও ভর্তি হতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্তানকে ভর্তি করতে না পারা অভিভাবকরা সংক্ষুদ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ভর্তি বিড়ম্বনার সম্মুখীন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দিনভর ব্যানার হাতে প্রতিবাদ জানানোর পর জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ভর্তির আশ্বাস মিলেছে।

এদিকে ব্যানারে লেখা দাবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো অভিভাবকরা জানান, রংপুর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীকে কৌশলে ভর্তি বঞ্চিত করা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য ও দুর্নীতি করা হয়েছে। মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানানো হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দুর্নীতির ব্যাপারেও মুখ খোলেন তারা।

অভিভাবকরা বলছেন, ৯ বছরের ঊর্ধ্বে ভর্তি যদি করা না হয় সেটি আগে জানানো উচিত ছিল। হঠাৎ করে এই খবর আসায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী ৭ বছর থেকে ৯ বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর কথা থাকলেও অনেকের বয়স ৯ বছরের ঊর্ধ্বে হয়েও ফলাফল এসেছে। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে পরে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়।

সরকারি স্কুলে ভর্তিতে লটারি করা হয় ১৭ ডিসেম্বর। ভর্তি প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করার কথা। সেই ধারাবাহিকতায় চলছে ভর্তি কার্যক্রম। এর মধ্যেই কিছু শিক্ষার্থীর বয়স ৯ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় ভর্তি না করার ঘোষণা আসে। ফলে আন্দোলনে নামেন রংপুর জিলা স্কুল ও রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা।

এদিকে সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে ৭ থেকে ৯ বছর বয়স হলে ৯ বছরের ঊর্ধ্বে রংপুর জিলা স্কুলে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ফলাফলের এসেছে। অপরদিকে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ডে শিফটে ৩০ জন এবং মর্নিং শিফটে ৩০ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল এসেছে।

রংপুর জিলা স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হওয়া রেজা নামে একজন অভিভাবক বলেন, শুধু আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করে দুর্নীতি করার অপচেষ্টা করছিল প্রতিষ্ঠান প্রধান। আমরা এর প্রতিবাদ জানাতে একসঙ্গে হয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।

আরেকজন অভিভাবক আব্দুল মতিন বলেন, আমার নাতিকে নিয়ে এত যুদ্ধ। তাকে ভর্তি করাবো বলেই সারাদিন আন্দোলন করতে হলো। কেন এত আন্দোলন করতে হলো তা বুঝে উঠতে পারছি না।

আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে বলেন, আমার ছেলেকে রংপুর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য যখন আবেদন করেছি তখন ওর বয়স ৭ দিন বেশি ছিল একথা তো কেউ বলেনি। তখন তো আবেদনপত্রটি বাতিলও করা হয়নি। সবকিছু ঠিক ছিল বলেই অন্যান্যদের মতো আমার ছেলের নামটিও লটারিতে এসেছে। যদি সমস্যা থাকতো তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ লটারি করার সময়ও নাম বাদ দিতে পারতো। সেটা তো তারা করেনি। এখন লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার পর আমি ছেলেকে ভর্তি করাতে পারছি না। বয়স বেশির অজুহাত তুলে আমার ছেলের মতো আরও অনেককে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। এখন যা হয়েছে তা অমানবিক এবং বেআইনি।

মোস্তাফিজার রহমান নামে আরেক অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান লটারিতে শত শত শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে নির্বাচিত হওয়ার পরেও ভর্তি হতে পারছে না। হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অবিলম্বে লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক লতা রাণী বলেন, আমাদেরকে বাদ দিয়ে ওরা টাকা দিয়ে ভর্তি করাবে এমনটা শুনছি। তাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা এই বিড়ম্বনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। অবশেষে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে ভর্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

সাবরিনা রহমান নামে আরেক অভিভাবক বলেন, অহেতুক আমাদের মতো অভিভাবকদের হয়রানি করা হয়েছে। যখন বাচ্চাদের ফরম পূরণ করা হয়েছে, তখন কেন তারা বয়স দেখেনি। এখন কেন আমাদেরকে আন্দোলন করতে হয়। কেন আমরা হয়রানির শিকার হবো?

রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চমান সহকারী ময়না বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আমাদেরকে যেভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা সেভাবেই চলছি। এবারে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা আবারও আসছে, তার মানে সফটওয়্যার আপডেট করে নাই। 

রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সম্পূর্ণ অসত্য।

রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী আশরাফী বলেন, গোটা বাংলাদেশ যেভাবে চলে, যা আদেশ আসে আমরা সেভাবেই চলি। এখানে দুর্নীতির কোনো প্রশ্ন আসে না। সফটওয়্যার যেভাবে আছে সেভাবেই ফলাফল এসেছে।

এর আগে, সকাল থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক রংপুর জিলা স্কুলের সামনে মানববন্ধন বিক্ষোভ করে মিছিল নিয়ে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে সেখানেও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে