গত ৩১ আগস্ট ‘ওজোপাডিকোর ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের দুর্নীতি তদন্তের দাবি’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার বয়রায় অবস্থিত ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) সদর দপ্তরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদক খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে দুদকের এনফোর্সমেন্টের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র ও উপসহকারী পরিচালক মো. শামীম রেজা।

দুদক খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৩১ আগস্ট ঢাকা পোস্টে ওজোপাডিকোর শ্রমিক ইউনিয়নের সংবাদ সম্মেলনে বিগত ১৬ বছরে ওজোপাডিকো থেকে যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে তাতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখানে মনপুরা দ্বীপাঞ্চল ওজোপাডিকো একটি সম্প্রসারণ লাইন করছেন। অভিযোগ ছিল ওজোপাডিকো একটি তৃতীয় পক্ষ বেসরকারি লিমিটেড কোম্পানির থেকে ২১.২৫ টাকা রেটে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছে। বিক্রি করছে গ্রাহক পর্যায়ে যে লিমিট থাকে সেই মূল্যেই। পরবর্তীতে দেখা গেছে গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ টাকা করে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। আমরা প্রশ্ন করেছিলাম কেন লোকসান দিচ্ছেন? তারা বলেছেন, “এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। সেখানে সরকার একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে।”

তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে ফিজিবিলিটি-স্ট্যাডি রেকর্ডপত্র নিয়েছি। কোম্পানিটি স্ট্যাডি করার জন্য। ২০-২৫ বছরে কস্টিংয়ে কি পরিমাণ ইফেক্ট পড়তে পারে সে জন্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছি। সব রেকর্ডপত্র ইনস্ট্যান্ড পাওয়া যায় না। কিছু নিয়েছি, আর বাকিগুলোর তথ্য এক দিনের ভেতরে দেবেন বলেছেন। পরবর্তীতে আমরা যা পাবো সেটার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে রিপোর্ট কমিশনে দাখিল করবো।

১৬ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সময়ে তাদের (ওজোপাডিকো) চারটি প্রকল্প ছিল। যার দুটি বাস্তবায়ন হয়েছে আর দুটি চলমান রয়েছে। চারটি প্রকল্পেরই তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। সব তথ্যাদি আজ পাইনি, আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে দেবেন। এরপর আমরা দেখবো। এরপর তথ্য পর্যালোচনা করে কমিশনে রিপোর্ট দাখিল করবো।   

এর আগে ৩১ আগস্ট খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ১৬ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, এই সময়ে তাদের (ওজোপাডিকো) চারটি প্রকল্প ছিল। যার দুটি বাস্তবায়ন হয়েছে আর দুটি চলমান রয়েছে। চারটি প্রকল্পেরই তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। সব তথ্যাদি আজ পায়নি, আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে দেবেন। এরপর আমরা দেখবো। এরপর তথ্য পর্যালোচনা করে কমিশনে রিপোর্ট দাখিল করবো। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মনপুরা দ্বীপাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আপগ্রেডেশন প্রকল্প বাতিল করা প্রয়োজন। কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া এই প্রকল্প আত্মঘাতী। কারণ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সোলার পাওয়ার প্রডিউসারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে ২০-২৪ টাকায়। আর গড় বিক্রয় মূল্য ৮.৬৫ টাকা। গড়ে প্রতি ইউনিটে লোকসান হবে ১২-১৬ টাকা। আমরা মনপুরায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানাই। প্রকল্প ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নিলামে মালামাল বিক্রির দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানাই।

লিখিত বক্তব্যে মজিবর রহমান বলেন, ওজোপাডিকোতে কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে ৫৩৭ জন। শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১৯৪ জন। অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে কোম্পানিতে মাথাভারী প্রশাসন সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন), নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি), একটি প্রধান প্রকৌশলী, চারটি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মহাব্যবস্থাপকসহ (হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড অ্যাডমিন) অপ্রয়োজনীয় সব পদ বিলুপ্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, ওজোপাডিকোর মোট গ্রাহক ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৮ জন। এর বিপরীতে সরাসরি গ্রাহক সেবার দায়িত্বে থাকা কারিগরি শ্রমিক বা লাইন স্টাফ আছেন ৪৮৫ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩ হাজার ২৪৮ জন গ্রাহককে সেবা প্রদানের জন্য মাত্র একজন লাইন স্টাফ রয়েছেন। তাদের ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় এসব পদে শ্রমিক নিয়োগ করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদসহ দলবাজ ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকর্তাদের অপসারণ, আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বাতিল করে স্থায়ীভাবে শ্রমিক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের মতো শ্রমিকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা, কর্মকর্তা-শ্রমিক কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করা এবং কোম্পানিতে পিআরএল ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়।

মোহাম্মদ মিলন/এএমকে