গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এটা মনে রাখা সবার দরকার, শেখ হাসিনা কিংবা এর আগেও যত দুঃশাসন হয়েছে তারা যে ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে দুঃশাসন কায়েম করেছে সে ব্যবস্থা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। সেই ব্যবস্থা বদল করা একটি বড় কাজ। জগদ্দল পাথরটাকে আমরা সরাতে পেরেছি, কাজেই ব্যবস্থা বদল করার ব্যাপারে আমরা পিছিয়ে গেলে হবে না, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটাই মূল বার্তা। গণতন্ত্রের জন্য গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী পাহারাদার দরকার হয়। গণতন্ত্র এমন কোনো ব্যবস্থা নয় যে একবার খোদাই করে লিখে দেওয়া হলো তা সয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত হবে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের হাতে ক্ষমতা, জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্র।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর টাউনহল মুক্তমঞ্চে ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক এক গণসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন।

গণসংহতি আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার উদ্যোগে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষে এই গণসংলাপের আয়োজন করা হয়।

এ সময় তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রকে পাহারা না দিলে নানাভাবে জনগণের হাত থেকে ক্ষমতা দূরে সরে যায়। আমাদের দেশের বর্তমান সংবিধানে রয়েছে জনগণ হচ্ছে সব ক্ষমতার উৎস। কিন্তু লেখা থাকার পরেও গত ৫৩ বছরে জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে পারে নাই। কাজেই লেখা থাকলেই হবে না। তাই আমরা বলছি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। কারণ বিদ্যমান বন্দোবস্ত একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত, কর্তৃত্ববাদী বন্দোবস্ত, স্বৈরাচারী বন্দোবস্ত। এর মধ্যে যারাই ক্ষমতায় যায় তারাই ক্ষমতা ব্যবহার করে স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ—এগুলো কায়েম করে। শেখ হাসিনা তার সর্বোচ্চটা দেখিয়ে দিয়ে গেছে, কী কী করা যায়। তিনি ভেবেছিলেন এভাবে শক্তপোক্ত করে পুরোটাকে যদি জমিদারি বানিয়ে ফেলা যায় তাহলে বোধহয় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তাকে বারবার বলেছিলাম, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে না। জনগণ যেদিন জেগে উঠবে সেদিন আপনার পালাতে হবে। ৭ জানুয়ারির আগে এ কথা বহুবার বলেছি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, দুটি বিষয় খুব জরুরি দরকার। এক নতুন বন্দোবস্ত, তার জন্য নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান দরকার। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইন এগুলো সংস্কার করা। এমনভাবে নির্বাচন করা যাতে একটি নির্বাচন নয়, প্রত্যেকটি নির্বাচনে জনগণ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। জনগণের ভোটে যারা জয়লাভ করে তারা ক্ষমতায় যাবে। এই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। একইসঙ্গে আমাদেরকে এমনভাবে একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে যারা সত্যিকার অর্থে জনগণের ক্ষমতার পাহারা দেবে। ওইটা ছাড়া বিদ্যমানশক্তি বদলাবে না। কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়লে তারা বদলাবে না। আজকে নতুন রাজনৈতিক শক্তি আমাদের গড়ে তুলতে হবে। যারা গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের অধিকারের জন্য, জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, আমরা গণশক্তি আন্দোলন একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে চাচ্ছি।  কারণ গণতন্ত্রের শক্তিকে সংহত করতে হবে। আমাদের ছাত্র-তরুণরা রাজনীতিতে এসেছে, তারা অভ্যুত্থানে যুক্ত হয়েছে। আমরা মনে করি এই ছাত্র, শ্রমিক, তরুণদের মধ্য থেকেও রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠবে। জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি যত শক্তিশালী হবে এ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা তত কায়েম করতে পারবো। সব সময় দেখা গেছে যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায় তারা নানা কায়দায় নতুন রাজনৈতিক শক্তিকে দমিয়ে দেয়। অথবা তার যেন বিকাশ না ঘটে তার ব্যবস্থা করে। এইবারও সেটা করবে। কাজেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে আমরা আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিতে পারবো। কতিপয়ের হাতে দেশটাকে দিয়ে যদি ভাবি নিরাপদে থাকবো, যার যার ঘরে ফিরে যাবো তাহলে সেই বাংলাদেশকে আমরা ওই জায়গায় পৌঁছুতে পারবো না।

গণসংহতি আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক মোস্তাফজিুর রহমান রাজীবের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এ আর এম মুসাদ্দিক আসিফের সঞ্চালনায় গণসংলাপে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নিলু, জাতীয় পরিষদের সদস্য শামসুল আলম, সম্মিলিত পেশাজীবী সংহতির আহ্বায়ক মির্জা নাজমুল হুদা, জাতীয় পরিষদের সদস্য অমিত হাসান দিপু প্রমুখ।

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এএমকে