সব রকম অবকাঠামোগত সুবিধা থাকার পরেও শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে ২১টি পণ্য আমদানির কথা থাকলেও শুধুমাত্র পাথর আমদানির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বন্দরটি।

একটা সময় এই বন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন শতাধিক পাথর বোঝাই ট্রাক আসতো, সেখানে এখন ভারত ও ভুটান থেকে গড়ে মাত্র ২০-২৫টি ট্রাক আসছে। রপ্তানি কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি ছাড়া এ বন্দরের গতি বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। এদিকে বিধি অনুযায়ী পণ্য আমদানি করলে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বৃটিশ আমল থেকেই নাকুগাঁও বন্দরটি চালু ছিল চেকপোস্ট হিসেবে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে প্রায় ৩৩ বছর পর বন্দরটি ইমগ্রেশন চেকপোস্টসহ স্থল শুল্ক বন্দর হিসেবে পুনরায় চালু হয়। আমদানি করা হয় ভারতীয় কয়লা এবং পাথর। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বারাঙ্গাপাড়া থানার ডালু স্থল শুল্ক ষ্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত এই বন্দরটি খুব দ্রুত সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিতি পায়।

২০১৪ সালে ভারত থেকে পণ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ, কাস্টমস কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা ও সেবা প্রদানের লক্ষে নাকুগাঁওকে স্থল বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ দশমিক ৪৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তা প্রাচীর, চারশ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়্যার হাউজ, ওপেন ইয়ার্ড, একশ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়েব্রিজ, দ্বীতল অফিস ভবন, ব্যারাক ভবন, টয়লেট কমপ্লেক্স, পাওয়ার হাউজ ভবন, শ্রমিক-চালকদের জন্য গোসলখানা, ২টি ওয়াচ টাওয়ার, বৈদ্যুতিকরণ, সিকিউরিটি রুম, ৪টি ফ্ল্যাড লাইট। দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ।

২০১৫ সালের ১৮ জুন স্থল বন্দর হিসেবে এই বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়। অনুমতি দেওয়া হয় গবাদিপশু, মাছের পোণা, তাজা ফলমূল, গাছগাছড়া, বীজ, গম, পাথর , কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনা পাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টাজ, শুটকি ও সুপারি। এছাড়া সব বৈধ পণ্য রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ে কোনো তদারকি না থাকার কারণে কয়লা ও পাথরের মধ্যে আটকে পড়ে বন্দরের কার্যক্রম। বর্তমানে ভারতের পরিবেশবাদীদের বাধার কারণে কয়লা আমদানিও বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু সীমিত আকারে ভারত এবং ভুটান থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। কালে-ভদ্রে দু এক গাড়ি সিমেন্ট, তাঁতের শাড়ি ও মশারি রপ্তানি করা হলেও, এর হিসেব খুবই নগণ্য। ফলে বন্দরের স্থাপনা সমূহ অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে। আগ্রহ হারাচ্ছে আমদানীকরাকরা। আমদানি-রপ্তানীকারক সমিতির হিসেব অনুযায়ী বন্দরে প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসায়ী নিয়মিত ব্যবসা করতো। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০/৭০ এ।

আমদানীকারকরা জানান, যে সমস্ত পণ্য আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় পক্ষের অনীহার কারণে সে সব পণ্য আমদানি করা যায় না। তারা জানান, নাকুগাঁও বন্দর থেকে তিনশ কিলোমিটার দূরে ভারতের আসামের জগির রোড এলাকায় এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় শুটকি মাছের বাজার। যা আমদানি করতে এখানকার ব্যবসায়ীদের প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কাস্টমসের অসহযোগিতার কারণে তারা তা আনতে পারেন না। এছাড়া তাজা ফলমূল, আদা পিয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি ও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতেও একই সমস্যা। তারা মনে করেন দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ছাড়া এ বন্দরের গতি ফেরানো সম্ভব না।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, এই বন্দর দিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২ কোটি ৮৯ লাখ ২৪ হাজার ২১৪ টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৮১ টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৫ কোটি ৫৬ লাখ ১৪ হাজার ৬১৪ টাকা ও চলতি অর্থবছওে অক্টোবর পর্যন্ত ১২ কোটি ১৯ লাখ ৭৪ হাজার নিরানব্বই টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেছে।

বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, শেরপুরসহ এই বেল্টে শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই বন্দর দিয়ে শুঁটকি, কয়লা পাথর, সুপারি, ফলমূল আমদানি-রপ্তানি করা যেতে পারে।

নাইমুর রহমান/আরকে