রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের নারী সালমা আক্তার (৩৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং মূল আসামি আরিফ শেখকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকার সাভার থানার গেন্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন রাতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন।

গ্রেপ্তারকৃত আরিফ শেখ বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আলাউদ্দিন শেখের ছেলে। নিহত সালমা আক্তার উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়দ আলী মন্ডলের মেয়ে। আরিফ শেখ নিহতের প্রতিবেশী হন।

মামালার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৭ সালে গোবিন্দপুর গ্রামের আকামুদ্দিন সরদারের (৪০) সঙ্গে সালমার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান আছে। ২০২১ সালে পারিবারিক কলহের জের ধরে সালমার সঙ্গে তার স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকেই সালমা তার সন্তানসহ আলাদাভাবে বসবাস করতো। চলতি বছরের গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সালমা একই গ্রামে তার বাবার বাড়িতে যান। বাবার বাড়িতে তিনি কিছুক্ষণ অবস্থান করে মাগরিবের নামাজের সময় আবার চলে আসেন। পরে সালমার মেয়ে তার মাকে খোঁজার জন্য তার নানা বাড়িতে যান। তখন সালমার বাবা তার নাতিসহ মেয়ে সালমাকে খুঁজতে থাকেন। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোবিন্দপুর গ্রামের সায়েন্স উদ্দিন শেখের লেবু বাগানে একটি লেবু গাছের ডালে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় সালমাকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় গত ২ নভেম্বর নিহত সালমা আক্তারের বাবা মো. সৈয়দ আলী মন্ডল বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, মামলার ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে বালিয়াকান্দি থানাসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা নিবিড় তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলমান থাকার এক পর্যায়ে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরিফ শেখকে আজ ২০ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় ঢাকার সাভার থানার গেন্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ সালমা হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সালমার আচার-আচরণ ছিল উগ্র। তার বাড়ির সীমানায় থাকা রাস্তায় কেউ চলাচল করলে তাকে বকাবকি করতো। টিউবওয়েলের পানি নিতে আসলেও খারাপ ব্যবহার করত। এছাড়া আরিফের পরিবারে সবসময়ই অশান্তি লেগে থাকতো। এজন্য সেও হতাশাগ্রস্ত ছিল। ঘটনার দিন আরিফ সালমার বাড়ির সীমানা দিয়ে হেঁটে আসার সময় সালমা তাকে গালি দেয়। পাল্টাপাল্টি গালিগালাজের এক পর্যায়ে আরিফ বলপ্রয়োগ করে সালমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে অজ্ঞান করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে সালমার পরনের ওড়না দিয়ে লেবু গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে রাখে। পরে সে স্থান ত্যাগ করে ঢাকার সাভার থানার গেন্ডা এলাকায় চলে যায়। সেখানে সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করছিল। পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আরিফকে আজ ২০ ডিসেম্বর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আরিফ বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব, ডিআইও-১ বিপ্লব দত্ত চৌধুরী, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে