সংগৃহীত

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে (ক্লিনিক) এক প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নবজাতক চুরির অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা নিরাময় হাসপাতালে ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তার পরিবার। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতক চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

লিখিত অভিযোগ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের ফয়সাল সরদারের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আয়েশা আক্তার খানমকে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা নিরাময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম তার আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে রিপোর্ট দেখে জানান, আয়েশার গর্ভে যমজ সন্তান রয়েছে। পরে দুটি বিছানা ও অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত হতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানকার গাইনি চিকিৎসক মুসলিমা জাহান ঐশি ওই দিন বিকেলে আয়েশার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন। পরে একটি ছেলেসন্তান দেওয়া হয় আয়েশার কোলে। এ সময় অপর নবজাতকের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়, তার একটি সন্তানই হয়েছে। প্রথমে বিষয়টি জানাজানি না হলেও পরে আয়েশা-ফয়সাল দম্পতির স্বজনেরা বিষয়টি জানার পরে তারা আজ দুপুরে পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আলট্রাসনোগ্রামের প্রতিবেদন ভুল থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি হয়নি বলে দাবি করে তারা। 

ভুরঘাটা নিরাময় হাসপাতালের প্রধান তথ্য প্রদান কর্মকর্তা হান্নান ব্যাপারী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক বলেছেন একটি শিশুর কথা। সেই শিশুকে তার মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের এই হাসপাতাল নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক কাজ হইতেছে, তাই শিশুর পরিবার দুটি বাচ্চার কথা বলছে। যদি দুটি শিশুর কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেন, তাহলে এই প্রতিষ্ঠান তালা মেরে আমরা চলে যাব।’

চুরি হওয়া নবজাতক ফেরত চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করে আয়েশার শ্বশুর রুহুল আমিন সরদার বলেন, ‘সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের আগেও বলছে দুটি বাচ্চার কথা। পরে বলে গর্ভে ছিল একটি শিশু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বাচ্চা চুরি করেছে। আমি আমার অন্য আরেক সন্তানকে ফেরত চাই। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার চাই।’

প্রসূতি আয়েশা আক্তার খানম বলেন, ‘কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছে, তখন দুটি বাচ্চা দেখা গেছে। কিন্তু অপারেশনের পর আমাকে দিয়েছে একটি সন্তান। আমি আমার আরেকটি সন্তানকে ফেরত চাই।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হাসপাতালটিতে গেলে গাইনি বিশেষজ্ঞ মুসলিমা জাহান ঐশি বলেন, ‘দুটি নয়, একটি শিশু ছিল আয়েশার গর্ভে। এটা শতভাগ নিশ্চিত। তবে পরিবারের লোকজনের ধারণা থেকে দুটি শিশুর কথা বলছেন।’

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ভুরঘাটা নিরাময় হাসপাতাল থেকে একটি শিশু চুরি হয়েছে, এমন অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নবজাতকের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে।

আরকে