অপহরণ করে পতিতাবৃত্তি, গ্রেফতার ৪
প্রায় ৪ বছর আগে সিলেটের ঘাসিটুলা এলাকা থেকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারতের চেন্নাইয়ে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে পাচার করেন প্রতিবেশী পান্না বেগম (৪০)। চেন্নাইয়ে নিয়ে ওই কিশোরীকে পতিতাবৃত্তি করার জন্য ভারতীয় লোকজনের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি। পরে বাধ্য হয়ে ২ বছর ওই কিশোরী চেন্নাইয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়তে হয়।
আর ওই ঘটনার অভিযোগে এক নারীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২১ মে) রাতে সিলেট নগরের বাদামবাগিচা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে একজন মানব পাচারকারী ও তিনজন অপহরণকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতাররা হলেন সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইয়ের শামীম আহমদের স্ত্রী রেবা বেগম ওরফে সুমি ওরফে মীম (৩০), বিমানবন্দর থানাধীন বাদামবাগিচা এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে শাহেদ আহমদ (৩৩), দোয়ারাবাজারের মাছিমপুর গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৩) ও খাসদবির এলাকার ইমন আহমদ (৩২)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভারতে থাকাকালীন ওই কিশোরীর সঙ্গে রেবা বেগম ওরফে মীমের (৩০) পরিচয় হয়। একপর্যায়ে বছর দুই আগে ভারতের এক লোকের সহায়তায় ভিকটিম চেন্নাই থেকে পালিয়ে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসে। মীমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় সে দেশে এসে তার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।
পরে মীম কিশোরীকে আশ্বস্ত করে তার গ্রামের বাড়িতে তাকে পৌঁছে দেবে। কিন্তু মানব পাচারকারী মীম ভিকটিমকে কৌশলে তার গ্রামের বাড়ি থেকে সিলেটের বাদামবাগিচার একটি বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় কিশোরীকে জিম্মি করে তাকে নানারকম নির্যাতন করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে।
একপর্যায়ে ভিকটিম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মীমের বাসা থেকে পালিয়ে হাউজিং এস্টেট এলাকায় চলে আসে। সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রুবেলের (২৯) নিকট সহায়তা চাইলে সে তাকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অন্য এক সিএনজি চালক মামুনের (২৬) সহায়তায় ভিকটিম বর্তমান ফরহাদ আহমদের (২৬) বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করে।
এরপর শুক্রবার (২০ মে) পৌনে ৯টায় জোরপূর্বক অপহরণকারীরা ছোরার ভয় দেখিয়ে আশ্রয়দাতা ফরহাদ আহমদকে অপহরণ করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে বাদামবাগিচা ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
বিষয়টি জেনে ফরহাদের স্ত্রী ৬ হাজার টাকা আরেক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আনোয়ারের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার জন্য অপহরণকারীদের নিকট পাঠায়। একপর্যায়ে ফরহাদ বাধ্য হয়ে অবশিষ্ট ৪৪ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা জানালে তার সমস্ত কথা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম জাকির বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী দলের সদস্য মীম ও অপহরণকারী চক্রের আরও ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ভিকটিম কিশোরী ও ফরহাদ আহমদ থানায় দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তুহিন আহমদ/এমএসআর