হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে এমপির আল্টিমেটাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া এজাহারটি আগামী ২৪ মের মধ্যে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
শনিবার (২২ মে) রাতে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মেকাতাদির চৌধুরী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে আগামী ২৪ মের মধ্যে তার দেওয়া এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করা হলে আদালতে মামলা করবেন। এটি তার আল্টিমেটাম বলেও ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন।
গত ১ মে হেফাজতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুবারক উল্লাহসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড়শজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেওয়ার জন্য সদর মডেল থানায় এজহার দেন সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরী। তার পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার মামুন এজাহারটি জমা দেন।
পরদিন ২ মে এজাহারে উল্লেখিত ফেসবুকের লিংকগুলো থেকে রাষ্ট্রবিরোধী ও উত্তেজনাকর পরিস্থতি তৈরির পোস্ট দেওয়া হয়েছিল কিনা- সেটি পরীক্ষা করে মতামত দেওয়ার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে চিঠি দেয় সদর মডেল থানা পুলিশ। কিন্তু তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি।
এজাহারে বলা হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। তারা সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্র ও গান পাউডারসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করে।
মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মুবারক উল্লাহসহ অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, আইডি ও নিউজ পোর্টালে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বিদ্বেষ ও ঘৃণামূলক স্ট্যাটাস দিয়ে জনসাধারণের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ২৪ মের মধ্যে যদি আমার এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে না নেয়, তাহলে আমি আদালতে যাব।
এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, এটি মতামতের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। সিআইডির মতামত এখনও পাওয়া যায়নি। অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে মতামত আসতে দুই-তিন সপ্তাহ বা কম-বেশি সময় লাগে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, এটি আমরা সিআইডিতে পাঠিয়েছি মতামতের জন্য। উনি (বাদী) যে তারিখে এজাহার দিয়েছেন, তার পরদিনই আমরা পাঠিয়েছি। একটি মতামত এসেছে। আবার কয়েকটি কোয়েরি দিয়ে পাঠিয়েছে। সেগুলোও আমরা পাঠিয়েছি। এগুলো দেখে আবার মতামত দেবে। আমার মনে হয় শিগগিরই মতামত দিয়ে দেবে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। তিনদিনের ওই সহিংসতায় অন্তত ১১ জন নিহত হন। পুলিশের দাবি বিক্ষুব্ধরা হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থক।
আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর