বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মুগ্ধর আত্মত্যাগকে কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদের দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে বুক টান করে গুলি চালাতে আহ্বান জানানো এবং ‘পানি লাগবে পানি’ বলে মুগ্ধর ডাক দেওয়ার দৃশ্য আমার চোখে ভাসছে। তাদের এই আত্মত্যাগকে আমরা কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেব না। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আগামীদিনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হবে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব বলেন।

ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদ, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার-অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ইসলামী আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটি এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের বিজয় দিবসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথায় কষ্ট পেয়েছে। ভারত এ দেশ স্বাধীন করেনি বরং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে।

চরমোনাই পীর বলেন, স্বার্থান্বেষীরা বিগত ৫৩ বছরে নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আলেম-ওলামা ও কোনো কোনো ইসলামী দলকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতা লোভীরা নিজেদের স্বার্থে এদেশে ইসলাম নামক গাছটিকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে দেয়নি। বাংলাদেশকে কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে ইসলামী আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় গেছে তারা কল্যাণ বা ভাগ্যের পরিবর্তনের চেয়ে নিজেদের কল্যাণে কাজ করেছে। তারা হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করেছে। দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পাঁচ শতাধিক মানুষের চোখ অন্ধ করেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ভুল পথে হাঁটবেন না। আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। আপনারা এ দেশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা চাই সঠিক পথে থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন।

তিনি আরও বলেন, পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতের প্রতিনিধি সংসদে যাবে। সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। সংসদে সবার কথা বলার সুযোগ তৈরি হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমাদেরকে আর ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো যাবে না।

ইসলামী আন্দোলন রংপুর মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।

আরও বক্তব্য দেন, রংপুর জেলা সভাপতি মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান রিপন সরকার, রংপুর মহানগর সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আমিরুজ্জামান পিয়াল, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ রংপুর মহানগর সভাপতি মাওলানা মোসলেম উদ্দীন জিহাদী, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন রংপুর মহানগর সভাপতি হাফেজ নুর মোহাম্মাদ জিহাদী, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আওলাদ হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলন রংপুর মহানগর সভাপতি মাওলানা জয়নাল আবেদীন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর মহানগর সভাপতি মোহাম্মাদ আবু রায়হান প্রমুখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, যারা বাংলাদেশকে সিকিম বানাতে চায় তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে না। জুলাই বিপ্লবে আহতদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ছাড়াও দলটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অতিথিরা আগামী জাতীয় সংসদ ও রংপুর সিটি নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে