চার বছর বন্ধ থাকার পর পঞ্চগড় শিল্প সুগার মিল পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীন ৬টি (পঞ্চগড়, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর) চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।  

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকল সমূহ পুনরায় চালু করার জন্য ও চিনিকল লাভজনকভাবে চালানোর নিমিত্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়নের লক্ষে গঠিত টাক্সফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে ০৩/১২/২০২৪ তারিখে স্মারক মূলে পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১ম পর্যায়ে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, ২য় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং ৩য় পর্যায়ে কুষ্টি ও রংপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালুকরণের লক্ষ্যে উপর্যুক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।

বিষয়টি নিয়ে দুপুর ১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম তার ফেসবুক আইডিতে পঞ্চগড়বাসীকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘পঞ্চগড়বাসীর জন্য বিশাল সুখবর! চালু হচ্ছে পঞ্চগড় সুগার মিল! মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ! এবার সবাই জোরেসোরে কুশার লাগাও...।’

জানা যায়, প্রায় ২১ দশমিক ২৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে উত্তরের জেলার একমাত্র ভারি শিল্প চিনিকল। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নানা কারণে লোকসান গুনতে শুরু করে কারখানাটি। ২০২০ সালে এসে লোকসানে পড়ে দেশের ছয়টি কারখানার সঙ্গে পঞ্চগড় চিনিকলেরও আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে সরকার। তখন থেকে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে গত ৪ বছর ধরে মিলের পুরো এলাকাজুড়ে ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে আখ মাড়াই ও পরিবহনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

ভারি শিল্পের এ খাতটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হতে চলেছে চিনিকলের মূল্যবান জিনিসপত্রও। ২০১৮ সালে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ শুরু হলে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড।

পঞ্চগড় চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ বন্ধ থাকার পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিনিকলটি চালুর উদ্যোগ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড়ে আখ চাষ হচ্ছে। ৩১টি ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে। বর্তমানে ৭৯২ একর জমিতে আখ আবাদ হচ্ছে। এখন আখ মাড়াইয়ের মৌসুম চলমান। মাঠে ২০০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। আখ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। যাকে কৃষকরা আখ চাষে আগের সেই উদ্যমে আসে।

এদিকে গত ১৬ নভেম্বর বন্ধ থাকা সুগার মিল পরিদর্শনে এসে পঞ্চগড়সহ বন্ধ থাকা সকল সুগারমিল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি সেদিন বলেছিলেন, সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে অসংখ্য শহীদ, গুম হয়ে যাওয়া পরিবার আর নির্যাতিত মানুষের রক্তের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি। রক্তের ঋণ শোধ করতেই এই ভারি শিল্পগুলো চালু করে নির্যাতিত কৃষক শ্রমজীবী মানুষের কাজের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা চেষ্টা করছি একটার পর একটা বন্ধ কারখানা চালু করার। এই কথা পৌঁছে দিতে আমরা আপনাদের কাছে এসেছি যে আমরা কলকারখানা চালু করতে চাই। বন্ধ সমস্ত কলকারখানা চালুর পাশাপাশি নতুন উদ্যোগও নেওয়া হবে। সুগারমিলের যেসব জায়গা দখল হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

পঞ্চগড় চিনিকলের তেঁতুলিয়ার সিডিএ মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিনিকল চালুর প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি বিকেলে শুনেছি। পঞ্চগড়ে আগে ৫০-৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ আবাদ হতো। বর্তমানে ১৫-২০ হাজার মেট্রিক টন আবাদ হচ্ছে। ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রগুলো চালু করে দেওয়া হলে আখ আবাদ বেড়ে যাবে। আগে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২০-২২ হাজার মেট্রিক টন আখ হতো। এখন ১০ হাজার মেট্রিক টন হবে। চিনিকল চালুর বিষয়টি নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

পঞ্চগড় সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৬টি চিনিকল চালুর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে শিল্প উপদেষ্টা মহোদয়  এটি পরিদর্শন করে গেছেন। বর্তমানে এ জেলায় ৭৯২ একর জমিতে আখ আবাদ হচ্ছে। ৩১টি ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি চালু রয়েছে। এখন তো আখ মাড়াইয়ের মৌসুম। মাঠে ২০০ একর জমিতে আখ রয়েছে। আখ রোপণের সময় শুরু হয়েছে। আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।

এসকে দোয়েল/আরএআর