দিনাজপুরে আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার কম উৎপাদন খরচে আলুর বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। জমি থেকে পাইকাররা ৫৭ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ নগর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে সাতটি জাতের আলু লাগিয়েছি। জমি থেকে পাইকাররা ৫৬ টাকা কেজি দরে আলু নিয়ে যাচ্ছে। তবে আর ১০ দিন আগে আলুটা তুলতে পারলে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। ৫৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করার পরেও আলুর ফলনটা ভালো হওয়ায় লাভ ভালো হচ্ছে।

কৃষক মো. এনতাজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের সাতটি জাতের আলু চাষ করছি। তিন বিঘা জমিতে সব মিলে আমার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিন বিঘা জমির আলু বিক্রি করছি সাড়ে ৫ লাখ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও আমার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ। আমি ৬০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছি। আগাম আলুর ফলন গতবারের তুলনায় বেশি ও দাম ভালো থাকায় লাভ বেশি হয়েছে।

কৃষক মাহাতাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগাম জাতের আলু দুই বিঘা জমিতে লাগিয়েছি। আলু তুলতেছি, বাজারে আলুর দাম ভালো থাকায় আশা করছি লাভবান হব।

কৃষক ছাদেকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছি। আলুর বীজের দাম বেশি থাকায় এক বিঘা জমিতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলু বিক্রি হবে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বীজের দামটা কম থাকলে আরও বেশি লাভ হতো।

চিরিরবন্দর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিনহাজুল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউসবপুর এলাকায় আগাম জাতের আলু ব্যাপক হয়েছে। কৃষকরা ফসলের মাঠ থেকে আলু উত্তোলন শুরু করেছেন। চাষিদের কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আলুর যে প্রধান রোগ লেদ লেইট ব্লাইট, এবার আগাম জাতের আলুতে সেই রোগটি নাই। ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। তাই আশা করছি, আগামী মৌসুমে আগাম জাতের আলুর চাষ আরও বাড়বে।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন আগাম জাতের আলুর চাষ হয়েছে ইতোমধ্যে সাতটি জাতের আলু উত্তোলন শুরু করেছেন কৃষকরা। আগাম জাতের আলু ৬৫ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে তুলতে পারেন কৃষকরা। সাধারণত সেক্টর প্রতি আগাম জাতের আলুর ফল ১০ থেকে ১২ মেট্রিকটন, তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা যে আলু তুলছেন সেখানে আমরা দেখছি হেক্টর প্রতি ১৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরা ৫৭ টাকা কেজি দরে জমি থেকে আলু বিক্রি করছেন। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও তারা ভালো লাভবান হচ্ছেন।

সোহাগ/দিনাজপুর