বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, রিয়েলিটি মেনে নিতে হবে। শেখ হাসিনা নেই এটা রিয়েলিটি। শেখ হাসিনা কখনোই ক্ষমতায় আসতে পারবে না সেটিও রিয়েলিটি। রিয়েলিটি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ একটি বিপ্লব-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই সরকারের প্রধান হচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি হচ্ছে রিয়েলিটি। এটা ভারতকে মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশের একটি পরিবর্তন হয়েছে এটা মেনে নিতে হবে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী শহরের আজাদী ময়দানে জেলা বিএনপির পার্টি অফিসে জেলা বিএনপির কাউন্সিল উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের দাদাগিরি পছন্দ করে না এটা মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে প্রতিবেশী হিসেবে দেখতে চায়। সুতরাং সৎ প্রতিবেশীমূলক আচরণ ভারতকে করতে হবে। আর তা না করে যদি দাদাগিরি করতে চান তাহলে দাদাগিরির জামানা শেষ হয়ে গিয়েছে। দাদাগিরি আর কখনো করতে আসবেন না, এটা বাংলাদেশে চলবে না। এই বাস্তবতা যদি ভারত মেনে নিতে পারে তাহলে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুন্দর হবে। সম্পর্ক শুধু এটা না যে দিয়ে দিয়ে সম্পর্ক করতে হবে। ভারতের বাংলাদেশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভবিষ্যতে এমন একটি সরকার চাই যে সরকার ভারতের চোখের ওপর চোখ রেখে তাকিয়ে কথা বলতে পারবে। আমরা এমন সরকার চাই যে সরকার মাথা নিচু করা সরকার না। আমরা এমন সরকার চাই কখনো যদি ভারতে দাঙ্গা হয় ওইখানে যদি কোনো মুসলমান অথবা অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষ যদি নিহত হন ও দাঙ্গার শিকার হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ সরকারকে বলতে হবে তোমার দেশের মুসলমানরা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। সংখ্যালঘুরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে বাংলাদেশ পারে না। অবশ্যই বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। আমরা সেই সরকার চাই। নতজানু সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ কখনোই গ্রহণ করবে না।

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ভারত শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কে রেখেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। শেখ হাসিনাও নাই, ভারতও এখন নাই। এ রকম একটি হাহাকার তারা করছে এখন। তারা এক ব্যক্তির জন্য হাহাকার করছে। শুধুমাত্র এক ব্যক্তির জন্য ভারত বাংলাদেশের মানুষের সাথে দুশমনি করছে। ভারত বাংলাদেশের পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশের আপামর মানুষ এই স্বৈরাচারের পতনের জন্য ভূমিকা পালন করেছে। এই স্বৈরাচার আর কখনোই ফেরত আসবে না। স্বৈরাচারীর কখনোই ফেরত আসার সুযোগ নাই। সুতরাং বাস্তবতা মেনে নিতে হবে ভারতকে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলতো ভারতকে যা দিয়েছি সারাজীবন মনে রাখবে। তার দুর্ভাগ্য হচ্ছে ভারতের জনগণ মনে রাখবে, বাংলাদেশের জনগণ তাকে মনে রাখবে এই ব্যবস্থা তিনি করেন নাই। ভারতকে মনে রাখতে যে তিনি ভারতের সরকারকে দিতে দিতে দান খয়রাত করতে করতে এমন অবস্থা করেছেন বাংলাদেশটাকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির মধ্যে রেখে গিয়েছিলেন। তার মেয়ে শেখ হাসিনা ওই ঝুড়িটা পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছেন। এখন আমরা ধার দেনা শোধ করতে করতে ভালো অবস্থায় নেই।

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, রাজবাড়ী সব সময় ধানের শীষের ঘাটিঁ হিসেবে পরিচিত। গত ১৭ বছর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মারা গিয়েছেন। রাজবাড়ী জেলার বহু নেতাকর্মী জেল খেটেছেন,তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পরে, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে নতুন বিএনপির হয়তো জন্ম হয়েছে। অনেক আওয়ামী লীগ এখন বিএনপিতে এসে মিশতে চায়। কিন্তু এই ১৭ বছর আমাদের যে সকল নেতাকর্মী দলের বিপদের সময় তারেক রহমানের পাশে থেকে, তার সাথে থেকে, তার আদর্শে আদর্শিত হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে মাঠে ছিল, আন্দোলন করেছে, প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে, গুলি খেয়েছে, টিয়ারগ্যাস খেয়েছে, রাবার বুলেট খেয়েছে সেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবুর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. আসলাম মিয়া বক্তব্য দেন। 

রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম শিকদার পিন্টুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশিদ হারুন, রাজবাড়ী জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব একেএম সিরাজুল আলম চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান ঝন্টু, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম রোমান প্রমুখ। 

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর