চলতি বছরের আগস্টে অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েক দফায় আমন ধানের চারা পচে যাওয়ার পরও হাসি ফুটেছে ভোলার কৃষকদের মুখে। জেলায় এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের সোনালি ধান দোল খাচ্ছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে। 

রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়াতে খুশি কৃষকরা। আবাদের খরচ মিটিয়ে বিগত দিনের ধারদেনাও শোধ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। ধান পাকতে শুরু করায় কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।

ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) তথ্যমতে, ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা মিলিয়ে মোট ৭ উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ৪ লাখ ২৮ হাজার। তার মধ্যে আমন আবাদ করেছেন ৪ লাখ ২৫ হাজার। চলতি বছর ভোলার সাত উপজেলায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে  ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৬ হেক্টর। আমনের চারা পচে যাওয়ায় আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে। অনাবাদি আছে ৩ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমি। 

এর আগে আগস্ট মাসে অতিবৃষ্টি ও অতিজোয়ারের পানিতে দুই দফায় ১২ হাজার ৩৪১ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার ভেতর ৩ হাজার ৪১১ হেক্টর আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে আমনের চারা সংকটে জেলাজুড়ে ১৯ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কা ছিল।

সরেজমিনে ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার আমন ধানের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি ৫২, বিআর ২২, ২৩, স্বর্ণা, বিনা ১৭, ২০, ব্রি-৬৬, ৭০, ৭৮, ১০৩ সহ বেশ কয়েকটি আমনের জাত রয়েছে কৃষকের জমিতে। এ বছর ধানের দাম বৃদ্ধি ও  ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। ইতোমধ্যে অনেকে তাদের জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন। আবার অনেকে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা তাদের।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোসলেউদ্দিন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা জানিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমিতি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ক্ষেতে (জমি) আমন ধানের চারা লাগিয়েছি। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে আগস্ট মাসে ২ বার ক্ষেতের আমনের চারা পচে গেছে। এতে সমিতি থেকে নেওয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে আবার টাকা ধার করে ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে আবারও ধানের চারা লাগিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ ধান ভালো হয়েছে। আর কদিন পরেই কাটব। সবমিলিয়ে খরচাপাতি উঠে লাভ থাকবে।

ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজ মাল বলেন, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ১ হেক্টরের ধান, প্রায়ই ১২ মন ধান পেয়েছি। ক্ষেত থেকেই ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আবাদের হিসেবে এ বছর লাভবান হব। 

মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমার ২ হেক্টর জমিতে ৬০০ টাকা কেজিদরে প্রথমবার ১০ কেজি আমন ধানের চারা রোপণের পর অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সব চারা পচে গেছে, পরে আবার লাগিয়েছি। দ্বিতীয়বারও পচে গেছে, তৃতীয়বার আবার রোপণ করেছি। এতে চলতি সিজনে একই জমিতে আমন আবাদের জন্য ৩০ কেজি আমনের চারা রোপণ করতে হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি কীটনাশকসহ প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরেও আশা করছি ন্যূনতম ২৭ হাজার টাকার ধান পাব।

একই গ্রামের মো. আবু বলেন, আগেভাগেই ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। একসঙ্গে সবার ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট হবে। অন্যান্য বছরের তুললায় এ বছর ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেশি, দুইবেলা ভাতসহ চা-নাস্তা করিয়ে ৬৫০ টাকা করে শ্রমিকদের দিতে হয়।

ধানের ব্যাপারী মো. মিজান বলেন, সরাসরি কৃষকের জমি থেকে ১০৭০ থেকে ১১০০ শত টাকা মণে আমন ধান কিনছি। পরে আমি আবার মণ প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করি।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ এ এফ এম শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলমান ক্ষরিক-২ মৌসুমে ভোলা জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও অতিজোয়ারের কারণের আমনের চারা পচে যাওয়ার পর অতিরিক্ত চারা সংগ্রহ ও কূশী ভেঙে রোপণের ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলায় ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৯ টন করে ফলন হয়েছে। যে-সব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

খাইরুল ইসলাম/এমএসএ