ভাষাসৈনিক গোলাম কাওসার আর নেই
ভাষাসৈনিক গোলাম কাওসার চানা ৯৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসভবন মেহেরপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ায় তিনি মারা যান।
বিজ্ঞাপন
গোলাম কাওসারের ছেলে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএফ মামুন লাকি তারা বাবার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তার তিন ছেলে, ছয় মেয়ে—নাতি, নাতনী ও আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রয়েছে।
আরও পড়ুন
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জানাজার নামাজ শেষে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে এই ভাষাসৈনিককে দাফন করা হবে বলে পারিবার সূত্রে জানা গেছে।
৫২-এর ভাষা সৈনিকদের হত্যার বিরুদ্ধে যে কয়জন মেহেরপুরে প্রতিবাদ ও মিছিল করেছিলেন তাদের মধ্যে গোলাম কাওসার চানা অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের সময়ে মেহেরপুরে যে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছিল, সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গোলাম কাওসার এবং সভাপতি ছিলেন মুন্সী সাখাওয়াত হোসেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ সালাম বরকত জব্বারদের হত্যার কথা মেহেরপুরে পরের দিন শুনতে পাওয়া যায়। তখন মুন্সী সাখাওয়াত হোসেন ও গোলাম কাওসার চানার নেতৃত্বে মেহেরপুর শহরের রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। পাক সরকারের ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকা ধর্মঘট চলাকালে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলি করা হয়। এ খবর পেয়ে তৎকালীন মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের হোস্টেলের ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ওই হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ২৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামের সভাপতিত্বে পৌর কালাচাঁদ মেমোরিয়াল হলের সামনে এক সমাবেশ করে। মুন্সি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের মুসলিম হোস্টেলের ছাত্ররা পোস্টারিং করেন।
গোলাম কাওসার ১৯৩০ সাল রতনপুর মিশন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তিনকড়ি শেখ, মা জয়তুন নেছা। গোলাম কাওসার চানা ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রের খেতাব পাননি। রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়িত না হলেও প্রতি বছর মেহেরপুর জেলা প্রশাসন মহান ভাষা আন্দোলনকারীর হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট ও ফুল তুলে দিয়েছে।
আকতারুজ্জামান/এমএসএ