চার মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে পাবনা বেড়া উপজেলার কাজীরহাট থেকে মানিকগঞ্জের আরিচা নৌরুটে চালু হলো স্পিডবোট সার্ভিস।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে কাজীরহাট ঘাটে স্পিডবোট সার্ভিসের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (পোর্ট) এ কে এম আরিফ উদ্দিন।

উদ্বোধনকালে এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর এই নৌরুটের দুই পাড়ের বোট মালিকরা লাপাত্তা হয়ে যায়। তাদের অনুপস্থিতির কারণে টানা চার মাস স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন দুই পাড়ের সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে বিআইডব্লিউটিএ এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। লাপাত্তা হয়ে যাওয়া স্পিডবোট মালিকদের রুট পারমিট বাতিল করা হয়। নতুন করে স্পিডবোট মালিকদের কাছ থেকে রুট পারমিটের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আগ্রহীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে প্রথম অবস্থায় কাজীরহাট ঘাটের ৪৩টি ও আরিচা ঘাটের ১১টি স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। আরও ৫০টি স্পিডবোটের রুট পারমিটের আবেদন রয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাপ্তরিক ও আইনগত বাধা দূর করে বাকি স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তখন পুরোদমে চলাচল শুরু হবে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ নানা বিধিবিধান মেনে স্পিডবোট পরিচালনা করার জন্য মালিক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের দিকে এই নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। কাজীরহাট থেকে আরিচা নৌরুটের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই রুটে চারটি ফেরি ও ৯টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে সময় কম লাগায় রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য স্পিডবোটই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই রুটের যাত্রীদের কাছে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ এই রুটে স্পিডবোটে চলাচল করে। ঈদের সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার যাত্রী এই রুটে স্পিডবোটে পারাপার হয়। বিগত সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের লোকজনের মাধ্যমে স্পিডবোটগুলো পরিচালনা করতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ফলে সেই দিন থেকে বন্ধ হয়ে যায় স্পিডবোট চলাচল।

এমন পরিস্থিতিতে লঞ্চ ও ফেরিতে চলাচল করছিলেন যাত্রীরা। তবে সময় বেশি লাগায় অস্বস্তিতে পড়ছিলেন তারা। দাবি জানিয়েছিলেন দ্রুত স্পিডবোট চালু করার।

পাবনায় কয়েকজন যাত্রী বলেন, আমরা অল্প কয়েকদিনের জন্য ছুটিতে বাড়িতে আসি। রাস্তায়ই এক দিন কেটে যায়। স্পিডবোট থাকায় দুই ঘণ্টার রাস্তা ২০ মিনিটে পার হওয়া যায়। এতদিন স্পিডবোট চালু না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আজকে এটা পুনরায় চালুর মাধ্যমে অনেকটা স্বস্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। তবে আগে যেভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ঝুঁকি নিয়ে বেশি যাত্রী বহন না করে এবং যাত্রীদের জিম্মি করে যেন গলা না কাটতে পারে সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি করার দাবি জানান তারা।

কাজীরহাট ঘাটের স্পিডবোট ব্যবসায়ী ফেরদৌস হোসেন ও আব্দুল বাতেন বলেন, বিগত সরকারের সময় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ নেতারা অবৈধভাবে স্পিডবোট ঘাট পরিচালনা করেছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিয়েছেন। এই রুটে যেখানে ২০ থেকে ২৫টি স্পিডবোট চালানো যথেষ্ট। সেখানে তারা ৮০টি স্পিডবোট চালাতেন। বড় একটা স্পিডবোটে ১৬ জন ধারণক্ষমতা, সেখানে তারা বেশি টাকার আশায় ২১/২২ জন বহন করতেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে জনবান্ধব স্পিডবোট চালু করতে চাই।

বিআইডাব্লিউটিএর নগরবাড়ি-কাজীরহাট-নরাদহ নদীবন্দরের পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল বলেন, স্পিডবোটের মালিকরা পলাতক থাকায় আগের স্পিডবোটের রুট পার্মিট বাতিল করা হয়েছে। অবশেষে অফিসিয়াল সিস্টেম সম্পন্ন করে নতুনভাবে অনুমোদন করে স্পিডবোট সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ভালোভাবে জনগণকে সার্ভিস দিতে চাই।

রাকিব হাসনাত/এএমকে