গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে আনন্দ মিছিলে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ মো. হাসান (১৮) নিখোঁজের চারমাস পেরিয়ে গেলেও পরিবার জানেন না হাসান বেঁচে আছে না মারা গেছেন। হাসান বেঁচে থাকলে সন্ধান চান ও মারা গেলে শহীদি মর্যাদার দাবি পরিবারের।

নিখোঁজ হাসান ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাচিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারি বাড়ির ভাড়াটিয়া দিনমজুর মো. মনির ও গোলেনূর বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ও সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান।  

এর আগে গত ১৭ আগস্ট ‘মুই বিচার চাই না, সরকার যেন খালি মোর পোলার লাশের খোঁজডা দেয়’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার হয় ঢাকা পোস্টসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে। 

জানা গেছে, কয়েকবার মেঘনা নদী ভাঙনের স্বীকার হয়ে নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে সংসারের অভাবের তাড়নায় হাসান ১০ বছর বয়সে পাড়ি জমান স্বপ্নের শহর ঢাকায়। গুলিস্তানের কাপ্তান বাজার এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। থাকতেন যাত্রাবাড়িতে। তার উপার্জনের টাকায় বাবা-মায়ের চিকিৎসা ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচসহ সংসার চলতো তাদের। নিজের উপার্জনের টাকায় জমি কিনে বাবা-মাকে স্থায়ী ঠিকানা করে দেওয়াই ছিল হাসানের একমাত্র আশা। সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ও বড় ছেলেকে না পেয়ে এখন পাগলপ্রায় বাবা-মা। 

হাসানের পরিবারের দাবি গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন হাসান। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিখোঁজ হওয়ার ২দিন পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে হাসানের পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান সাদা ট্রাউজার পরিহিত খালি গায়ে ভ্যানগাড়িতে করে গুলিবিদ্ধ-রক্তাক্ত অবস্থায় কোথায় যেন হাসানকে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি হাসানের। পরবর্তী সময়ে ছেলের সন্ধান চেয়ে গত ২৪ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় জিডিও করেছেন হাসানের বাবা মনির।

সরেজমিনে নিখোঁজ হাসানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়া ছবি ও বাড়িতে রেখে যাওয়া হাসানের ব্যবহৃত কিছু জামা-কাপড়ের মধ্যে আদরের সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আর বিলাপ করেছেন মা গোলেনুর বেগম। 

গত ৪ মাস ধরে ছেলের সন্ধ্যান পেতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও হাসপাতালের মর্গ, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ছেলের খোঁজ না পাওয়ায় ছেলের শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা মনির।  

অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে নিখোঁজ হাসানের সন্ধান চেয়ে মা গোলেনূর বেগম বলেন, হাসান আমার বড় ছেলে। হাসানের বাবা হার্টের রোগী। আমি নানান রোগে আক্রান্ত। হাসানের উপার্জনে চিকিৎসার খরচসহ সংসার চলতো। টিভিতে ৫ আগস্ট ঢাকার পরিস্থিতি খারাপ দেখে বড় মেয়েকে বলি হাসানকে একটা কল দে, তখন থেকেই হাসানের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। চার মাস পেরিয়ে গেলেও আজও পোলার খোঁজ পাই নাই বলেই ফের বিলাপ শুরু করলেন হাসানের মা।

হাসানের ছোট বোন সুমাইয়া বলেন, আমাদের পড়াশোনার খরচ ভাইয়া চালাত। আজ চারমাস পেরিয়ে গেলেও ভাইয়াকে কোথাও পাইতেছি না। বোন বলে ডাকার মতো মানুষ নেই। সরকারের কাছে আমার ভাইকে চাই,জীবিত হোক বা মৃত। 

হাসানের বাবা মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫ আগস্ট হাসান যাত্রাবাড়িতে আন্দোলনে ছিল। এরপর থেকে হাসান নিখোঁজ। ৭ আগস্ট ফেসবুকে একটা ভিডিওতে দেখছি গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত অবস্থায় হাসানকে ভ্যানগাড়িতে করে কই জানি লইয়া যাইতেছে। যাত্রাবাড়ি থানায় জিডি করেছি। গত ৪ মাস ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল, মর্গসহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি কোথাও পাইনি। পরে সমন্বয়ক সারজিস আলমকে জানালে তিনি এক জায়গায় গিয়ে খুঁজতে বললে সেখানে গিয়েও ছেলেকে পাইনি।

হাসানের বাবা আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার আকুল আবেদন, হাসান যদি জীবিত থাকে তাহলে তার সন্ধান যেন দেওয়া হয় আর। যদি হাসান গুলিতে মারা যায় তাহলে লাশের সন্ধানসহ তাকে সরকারিভাবে শহীদি মর্যাদার দাবিও জানান তিনি। 

৫ আগস্ট ঢাকায় হাসান নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার জেলা প্রশাসক মো.আজাদ জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। তার পরিবার জানাননি। 

আরকে