পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা কমতে থাকায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ভোরের পাহাড় কিংবা গাছের চারায় শিশিরের মুক্তোদানা শীতের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে । সমতল কি পাহাড়ি অঞ্চল, সর্বত্র এখন শীতের ডাক। রাতের কুয়াশার আবরণ আর সকালের শিশিরবিন্দু দেখে আপ্লুত হন অনেকে। দিনভর কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত দেখা দিচ্ছে ঘন কুয়াশা।

মূল শহরে শীতের তীব্রতা কিছুটা কম অনুভূত হলেও পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বেশ জাকিয়ে পড়ছে শীত। দিনের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও অনেক জায়গায় মিলছে না সূর্যের দেখা। পাশাপাশি কুয়াশার আধিক্যও রয়েছে বেশ। শীতের প্রভাবে প্রায় জবুথবু অনেক পাহাড়ি জনপদ।

শীতের সকাল যত আরামের তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট নিয়ে হাজির হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে। ভোরের আলো ফুটতেই জীবিকার টানে শ্রমজীবী মানুষের বাইরে ছুটে চলা। কেউ হুক্কায় টান দিয়ে কিংবা চা খেয়ে কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কুয়াশামাখা সকালে। শিশিরভেজা মাঠে কেউ দিচ্ছেন কোদালের কোপ আবার কেউ জমিতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

শহরের কুতুকছড়ি এলাকার বাসিন্দা সুশোভন দেওয়ান বলেন, একপ্রকার বাধ্য হয়েই সকালে বের হতে হয় আমাদের। কারণ আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, কাজ করলে তবেই পেটে ভাত জুটে।

আরেক বাসিন্দা নয়ন চাকমা বলেন, পাহাড়ি এলাকাগুলোতে শীত একটু বেশিই পড়ছে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে। বাচ্চাকে প্রাইভেটে দিয়ে তারপর জমিতে যাব কাজ করতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শীতকে সঙ্গী করে পাহাড়ি রমনীরা সকালে হাটে যাওয়ার উদ্দেশে পিঠে বাঁশের ঝুড়িতে কৃষিপণ্য নিয়ে গ্রামের পথ পাড়ি দিচ্ছেন। কুয়াশামাখা সকালে রাস্তার পাশে বসে পড়েছেন কলাসহ নানান কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য। জীবন যেন থেমে থাকার নয়। শীতের এই সকালে বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠা খাওয়ার দৃশ্য পাহাড়ি এই অঞ্চলেও ধরা দেয়।

পিঠা বিক্রেতা রহিমা আক্তার বলেন, প্রতিবছরই শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি পিঠা বিক্রি শুরু করি। সকালের দিকে বেচা বিক্রি বেশ ভালো হয়। বিকেলেও বাজারে আসা লোকজন পিঠা খেতে চায়। 

এদিকে শীত আসতেই গরম পোশাক কেনার ধুম পড়েছে পাহাড়ি এই জেলায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা মানুষজন ভিড় করছেন গরম পোশাকের দোকানে। বিক্রেতারাও জানালেন, কেনাকাটা ভালো হচ্ছে।

কলেজ গেট এলাকার বিক্রেতা রসুল মিয়া বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত শীতের পোশাকের কালেকশান আছে। মানুষজনও কেনাকাটা করছেন। ঠান্ডা ধীরে ধীরে বাড়ছে, আশা করছি সামনে বিক্রি আরও বাড়বে।

রাঙামাটি আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার ক্যা চি নু মারমা বলেন, রাঙামাটিতে শীতের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। ভোর ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এলাকাভেদে কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার দেখা মিলছে। তবে কুয়াশার স্থায়িত্ব বেশি নয়।

আগামীতে তীব্র কুয়াশা না পড়লেও পাহাড়ি এলাকাগুলোতে শীতের তীব্রতা কিছুটা বাড়বে বলে জানান তিনি। 

মিশু মল্লিক/এমএন