বাংলাবান্ধায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক, আসছে না ভারতীয় পাথর
ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ চারদেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। একাধারে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর কিছুটা স্থবিরতা তৈরি হলেও ভারত-বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতেও বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গত ১৮ নভেম্বর থেকে বন্দরটিতে ভারতীয় পাথর আসছে না বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে বন্দরটি ঘুরে দেখা গেছে, চলমান ভারত-বাংলাদেশের বৈরী সম্পর্কের মধ্যে বন্দরটির সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিনই ভুটান থেকে আমদানি হচ্ছে ট্রাক ভর্তি পাথর। তবে গত ১৮ নভেম্বর হতে বন্দরটিতে ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কারণ হিসেবে জানা গেছে দু’দেশের উত্তেজনা পরিস্থিতিতে নয়, পাথর না আসার কারণ হচ্ছে পাথরের ভাড়া কমে যাওয়ায়। এ নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ভারতের ফুলবাড়ি বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফার এসোসিয়েশন বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নকে দেওয়া চিঠি সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পাথরের ভাড়া কমে যাওয়ায় ৬০ টাকা খরচ বহন করতে পারছেন না সেদেশের লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফার এসোসিয়েশন। টন প্রতি আনলোড ৩০ টাকা ধার্য করলে তারা পুনরায় ট্রাক চালু রাখবেন। তা নাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন। এ কারণেই ভারতের পাথর আমদানি হচ্ছে না।
আরও পড়ুন
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীরা ও আমদানিকারকরা বলছেন, বন্দরটির সীমান্তগুলোতে চলমান বাংলাদেশ-ভারতের পরিস্থিতিতে কোনো সমস্যা নেই। স্বাভাবিক চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। তবে গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বন্দরটি পাথর নির্ভরশীল। ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের দেশে সম্পর্কের অবনতি হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। বন্দর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে নিয়মিত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কয়েকদিন ধরে ভারতের পাথর আসছে না। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ভারতের লোড-আনলোড এসোসিয়েশন ট্রাক পাঠাচ্ছেন না। তবে ভূটান থেকে প্রতিদিন আমদানি করা দুইশ থেকে আড়াইশ পাথর বোঝাই ট্রাক প্রবেশ করছে বন্দরে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় ১০ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি। ১৯৯৭ সালে নেপালের সঙ্গে এক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে প্রথম আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৭ সালে ভুটানের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে বন্দরটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মেট্রিক টন পাথর আমদানি হচ্ছে। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৮ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৩০ হাজার ৪১৭ টন পণ্য। আমদানির পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরের ৩ লাখ বর্গফুটের ইয়ার্ডে দেখা দিয়েছে জায়গা সংকুলান।
বর্তমানে বন্দরটি আমদানিকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশই পাথর। এছাড়া মসুর ডাল, গম, ভুট্টা, চিরতা, হাজমলা, যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিকদানা, খইল, আদা ও চিটাগুড় আমদানি করা হয়। বর্তমানে গত কয়েক দিনে দুই দফায় ২০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারত ও নেপালে পাট, ওষুধ, প্রাণ ও ওয়ালটনের পণ্য, জুস, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, গেল অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বন্দরটি দিয়ে ৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয় হয়েছে ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বাংলাবান্ধা কাস্টম সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এটা ঘিরে আমাদের স্থলবন্দরটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়েনি, সব স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কিছুদিন ধরে ভারতের পাথর আমদানি হচ্ছে না। এর কারণ চলমান ইস্যু নয়, ভারতের ফুলবাড়ি বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের ট্রাকের ভাড়া কম হওয়ার কারণে পাথর পাঠাচ্ছেন না। আশা করছি এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে আমাদের চারদেশীয় স্থলবন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে চলমান পরিস্থিতিতেও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। নিয়মিত পাথর আমদানি হচ্ছে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে। তবে ভারতের ফুলবাড়ির ট্রাক মালিকরা তাদের পাথরের ভাড়া কম হওয়ায় পাথর পাঠাচ্ছেন না। সমস্যাটি সমাধানে আমরা ব্যবসায়ীরা কাজ করছি। সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমাদের অবস্থান থেকে আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের নেতা, বন্দর সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীরা মিলে সবাই গুরুত্ব সহকারে বন্দরে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এটাকে ঘিরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি। সব স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ভুটান থেকে ২০০-২৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ থেকে বন্দর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। গত ১২ দিনের মধ্যে দুইবার ভারত থেকে আতপ চাল আমদানি হয়েছে। তবে গত ১৮ নভেম্বর থেকে ভারতের পাথর আসছে না। এটা চলমান কারণ নয়। ফুলবাড়িতে ট্রাক মালিকদের ভাড়া নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। আশা করছি এটারও সমাধান হয়ে যাবে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মনিরুল ইসলাম (পিএসসি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে জেলার সীমান্তে কোনো সমস্যা নেই। সব স্বাভাবিক রয়েছে।
এসকে দোয়েল/আরকে